Coronavirus in Kolkata

Coronavirus: দু’টি ঢেউয়ের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও কেন এমন দিশাহারা অবস্থা?

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, করোনার সংক্রমণের লেখচিত্র নিম্নমুখী হয়েছিল মাঝে। তবে তার মানে এই নয় যে, সংক্রমণ চলে গিয়েছিল।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:১৮
Share:

মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল ফাইল চিত্র।

প্রথম ঢেউয়ের অভিঘাতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা ছিল সকলের। এবং সেটাই ছিল স্বাভাবিক। কারণ, তখনও করোনাভাইরাসের ধাঁধা কাটিয়ে ওঠা যায়নি। তার পরে বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস মতোই এল দ্বিতীয় ঢেউ। তখন অবশ্য সবাই জেনে গিয়েছেন, সংক্রমণ রুখতে কী কী করণীয়। কিন্তু তার পরেও করোনার সাম্প্রতিক স্ট্রেন ওমিক্রনের সামনে দিশাহারা অবস্থা প্রত্যেকের।

Advertisement

যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, দু’টি ঢেউয়ের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল? তা কি শুধুই ওমিক্রনের অত্যধিক সংক্রমণ-ক্ষমতার কারণে? না কি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অবিমৃষ্যকারিতা, দায়িত্ববোধের অভাবের কারণে আবার সঙ্কটের মুখোমুখি নগরজীবন? ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ওমিক্রন অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। কিন্তু অনেক সংক্রমিত ব্যক্তি পরীক্ষা না করে এমনিই বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে অন্যেরাও সংক্রমিত হচ্ছেন।’’

আর এখানে আরও একটি পুরনো প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তা হল, উপসর্গহীন রোগীর বিষয়টিও তো জানা। এ তো সংক্রমণের শুরুর পর্ব থেকেই ছিল। এমন তো নয় যে, উপসর্গহীন রোগী শব্দটি হঠাৎ করেই অভিধানে ঢুকে পড়েছে। ‘‘আসলে ৯৯ শতাংশ মানুষ কোভিড-বিধি পালনই করেননি। কোভিড-বিধি পালন করলে এই অবস্থা হয় না।’’— ক্ষোভের সুরে বলছেন ‘মাইক্রোবায়োলজিস্ট সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’র প্রেসিডেন্ট এ এম দেশমুখ। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সংক্রমণের দু’টি ঢেউয়ের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তৃতীয় ঢেউ সামলানোর ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ, পুলিশ-প্রশাসন-সহ সর্বস্তরে গাফিলতি দেখা গিয়েছে। তাতেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। শহরের সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘‘অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে যে, কী করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু সেই শিক্ষা আমরা যে গ্রহণই করিনি, তা বর্তমান পরিস্থিতিতেই প্রমাণিত।’’

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, করোনার সংক্রমণের লেখচিত্র নিম্নমুখী হয়েছিল মাঝে। তবে তার মানে এই নয় যে, সংক্রমণ চলে গিয়েছিল। বরং বিজ্ঞানী-গবেষকেরা বার বার বলে এসেছিলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসবে এবং সেখানে কোভিড-বিধি মানার গুরুত্ব কতটা। কারণ, অতীতের সমস্ত অতিমারির ক্ষেত্রে এমনটাই দেখা গিয়েছে। যখনই সংক্রমণ চলে গিয়েছে বলে মনে করা হয়েছে, তখনই তা প্রবল ভাবে ফিরে এসেছে। এটাই অতিমারির সাধারণ চরিত্র। যেমনটা স্প্যানিশ ফ্লু-র ক্ষেত্রে হয়েছিল। যে মুহূর্তে সাধারণ মানুষ ভেবেছিলেন যে দুর্যোগ শেষ, ঠিক তার পরেই প্রবল পরাক্রমে ফিরে এসেছিল স্প্যানিশ ফ্লু-র ঢেউ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরামর্শদাতার কথায়, ‘‘এ সব জানা সত্ত্বেও মাস্ক ছাড়া জমায়েত, দূরত্ব-বিধিকে নস্যাৎ করে দেওয়া, সব রকমের অনিয়ম চলছে চার দিকে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যের ও লজ্জার যে, মাস্ক পরার মতো সাধারণ একটা নিয়ম আমরা গত দু’বছরে অভ্যাস করে উঠতে পারলাম না! যেখানে জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিক জড়িয়ে রয়েছে।’’

এক ভাইরোলজিস্ট জানাচ্ছেন, শুধু করোনাভাইরাস কেন, সমস্ত ভাইরাসই যে মিউটেট করে, সেটা তো জানাই। ফলে সেটা সমস্যা নয়। তাঁর কথায়, ‘‘সমস্যা হল, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর এই মানসিক ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে যে, আমার কিছু হবে না। এবং এই ধারণা সংক্রমণের প্রথম পর্ব থেকেই রয়েছে। আমার কিছু না হলেও যে আমার মাধ্যমে অন্যদের হতে পারে, সেই সংবেদনশীলতা বেশির ভাগের মধ্যেই নেই। এই অতিমারি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সেটা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement