কলাপাতা পেতে ষোড়শ ব্যাঞ্জন দিয়ে ভূরিভোজের সেই ছবি এখন বাঙালির ভোজসভায় নেই বললেই চলে। মধ্যবিত্ত বাঙালির বিয়ে ইত্যাদির অনুষ্ঠানে এখন চিনামাটির প্লেট রাজত্ব করে।
কলাপাতা একেবারে উধাও হয়ে গিয়েছে তা অবশ্য নয়। অনেক ক্ষেত্রেই শালপাতার থালার উপর কলাপাতা এঁটে পরিবেশন করা হয় খাবার। তবে একসময় যে কলাপাতা ছিল স্বাভাবিক এবং অপরিহার্য, তা এখন বাঙালির কাছে ঐতিহ্যের স্পর্শ। বা ছোটবেলার দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। তবে গ্রামাঞ্চলে এখনও কলাপাতায় পরিবেশনের প্রথা অনেকটাই টিকে রয়েছে।
পাতা হিসেবে কলাপাতার আদর কমলেও, পাতুরির মতো পদের রান্নায় মোড়ক হিসেবে কলাপাতার কোনও বিকল্প নেই। ভেটকি ইত্যাদি মাছের পাতুরি ছাড়াও ইডলি, পানকি (গুজরাতি পদ), পার্সিদের বিভিন্ন মাছের পদ, অসমের ভাপোত দিয়া মাছ বা কেরালার ওনাম, এই সব পদই কলাপাতায় পরিবেশন করার প্রথা রয়েছে।
দক্ষিণ ভারতে অবশ্য এখনও গ্রাম-শহর নির্বিশেষে কলাপাতার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এখনও বেশিরভাগ অনুষ্ঠানেই চিনামাটি বা প্লাস্টিক কোটেড কাগজের থালা, প্লাস্টিক কোটেড শালপাতার থালার বদলে কলাপাতা ব্যবহার করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ দক্ষিণ ভারতীয়েরা।
কলাপাতায় খাওয়া কি নিছকই অভ্যাস বা অনভ্যাসের ব্যাপার? না কি এই অভ্যাস বা অনভ্যাসের সঙ্গে স্বাস্থ্যেরও কোনও সংযোগ রয়েছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আছে।
কলাপাতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
এতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল থাকে যা কলাপাতায় রাখা খাদ্য শুষে নেয়। এই পলিফেনল মানুষের শরীরের ক্ষতিকারক বর্জ্য নষ্ট করতে সাহায্য করে। বার্ধক্য, ক্যানসার এবং অন্যান্য রোগের সঙ্গেও লড়াই করতে সাহায্য করে কলাপাতা।
কলাপাতায় ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী কিছু বিশেষ উপাদানও রয়েছে, যা খাবারে থাকা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
এ ছাড়াও কলাপাতা (প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় এমন সব থালার থেকে তো বটেই) অনেক বেশি পরিবেশ বান্ধব। কলাপাতার বাইরে মোমের মতো এক বিশেষ আবরণ থাকে যা ধুলোবালি ও ময়লা ভিতরে ঢোকা থেকে পাতাগুলিকে অনেকটাই সুরক্ষিত রাখে।
জীবন গতিশীল হয়েছে। স্বাচ্ছন্দ্যমুখী হয়েছে। কলাপাতায় খেতে বসে কোলের উপর সুড়ুৎ করে গড়িয়ে পড়া ঝোলের বিড়ম্বনা আর বইতে চান না অধিকাংশই। হয়তো এই কারণেই কলাপাতা একটু একটু করে ব্রাত্য হয়েছে।
কিন্তু সাময়িক স্বাচ্ছন্দ দেখতে গিয়ে অনেক সময়ই স্বাস্থ্যের কথা ভুলে থাকি আমরা। অনায়াসে থার্মোকলের থালার মতো বিষাক্ত জিনিসও ঢুকে পড়ে বাজারে। তাই পুরনো বা নতুন যে ভাবেই হোক, কলাপাতা যদি টিকে থাকে সংসারে, মঙ্গল বৈ তো অমঙ্গল করবে না স্বাস্থের। ক্ষতি করবে না পরিবেশের।