KMC Polls 2021

KMC election 2021: প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কবে ভাববেন জনপ্রতিনিধিরা?

কতগুলো নির্বাচন পেরোলে জনপ্রতিনিধিরা বিশেষ নাগরিকদের বিষয়ে সত্যিই সচেতন হবেন?

Advertisement

দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৫৩
Share:

অসচেতন: কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন দফতরে পৌঁছতে ভাঙতে হয় সিঁড়ি। আলাদা ব্যবস্থা নেই প্রতিবন্ধীদের জন্য। নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা প্রতিবন্ধীদের পক্ষে উপযুক্ত একটি শহর কবে হয়ে উঠবে? পুর নির্বাচনের আগে এ শহরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের মধ্যে ঘুরছে এই প্রশ্নই।

Advertisement

বিশেষ ভোটারদের আক্ষেপ, প্রতিবন্ধীদের কথা সরকারের মনে পড়ে শুধু নির্বাচনের সময়ে এবং প্রতিবন্ধী দিবসে। রাজধানীতে বসে প্রতিবন্ধীদের জন্য সহানুভূতি-মেলা। অথচ, তাঁদের দাবি তো সমানুভূতি। রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী ইস্তাহারে জায়গা পায় একাধিক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এ নিয়ে কি আদৌ ভাবেন জনপ্রতিনিধিরা?

দৃষ্টিহীন নাগরিককে রাস্তার সিগন্যালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় এমন কোনও সহ-নাগরিকের, যিনি তাঁকে হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দেবেন। বিশেষ অভিভাবক সৌমেন উপাধ্যায়ের প্রশ্ন, “এক জন দৃষ্টিহীন কী ভাবে লাল-হলুদ সিগন্যাল বুঝে রাস্তা পার হবেন? পথচারী ও যাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য সিগন্যালে গান বাজে। তারই ফাঁকে দৃষ্টিহীনদের রাস্তা পারাপারের জন্য ঘোষণার ব্যবস্থা থাকলে কারও সাহায্যের প্রয়োজনই হত না।”

Advertisement

সৌমেনরা জানাচ্ছেন, প্রত্যেক প্রতিবন্ধী বা তাঁদের অভিভাবকেরা সন্তানকে স্বাধীন ভাবে চলার বা কাজ করার উপযুক্ত করে তুলতে লড়াই চালান। সরকারও বিভিন্ন পরিকল্পনার সময়ে সমানুভূতি দেখালে এই কাজটা সহজ হয়। বাস্তব চিত্রটা অবশ্য উল্টো।

চিকিৎসক ও থেরাপিস্ট অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “পুরসভা-পুলিশ বিভিন্ন সময়ে ব্যস্ত মোড়গুলিতে ফুটব্রিজ ব্যবহারের কথা ঘোষণা করে। কিন্তু হুইলচেয়ারে বসা বা ক্রাচের সাহায্যে চলা এক জন প্রতিবন্ধী মানুষ কী করবেন?” কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে রাস্তা পার হওয়ার একমাত্র উপায় সাবওয়ে। কোথাও রাস্তার থেকে ফুটপাত বেশ উঁচু। সে ক্ষেত্রে উপায়?

কলকাতা পুরসভার বিদায়ী মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের অবশ্য দাবি, ‘‘সাবওয়ে এবং ওভারব্রিজগুলিতে হুইলচেয়ারে যাতায়াতের জন্য র‌্যাম্পের ব্যবস্থা আছে। কিছু জায়গায়
অবশ্য সার্ভিস লাইন থাকায় ফুটপাত উঁচু। প্রতিবন্ধীদের চলার রাস্তাটা মসৃণ রাখার চেষ্টা সব সময়েই করা হয়।’’ অথচ, খাস পুরসভার সদর দফতরেই প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেই। একতলায় থাকা কয়েকটি দফতরে পৌঁছতে গেলে ভাঙতে হয় সিঁড়ি। কোনও দফতর আবার দোতলা বা তিনতলায়। সেখানে পৌঁছতেও কোনও লিফটের ব্যবস্থা নেই।

সমাজকর্মী শম্পা সেনগুপ্ত মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৬-র প্রতিবন্ধী অধিকার আইন অনুযায়ী, কোনও সরকারি বা প্রশাসনিক ভবনে প্রতিবন্ধীদের জন্য র‌্যাম্প ও ব্রেল রাস্তার ব্যবস্থা না রাখা
শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি বলেন, ‘‘সারা দেশের মধ্যে এ শহরই প্রতিবন্ধীদের চলার উপযোগী নয়। অন্যান্য শহরে দৃষ্টিহীনেরা একাই মেট্রোয়, বাসে যাতায়াত করতে পারেন। ব্রেল পথ রয়েছে তাঁদের জন্য। এ শহরে তো এমনটা ভাবাই যায় না!’’

চলাফেরার জন্য ট্রাই-সাইকেল সম্বল সন্তোষপুরের বাসিন্দা অলোক গায়েনের। আক্ষেপ ঝরে পড়ে তাঁর কথায়, “নিজের অধিকারটুকু বুঝে নিতে স্থানীয় কাউন্সিলরের
কাছে জব কার্ডের আবেদন করেছিলাম বছর তিনেক আগে। কাজ হয়নি। কার্ডটা পেলে অন্তত একশো দিনের প্রকল্পে কিছু কাজ পেতে পারি। সরকারি ভাতায় কি আর সংসার চলে?”

বস্তুত, এলাকার পুরপ্রতিনিধি পাশে দাঁড়ালে অনেকটাই এগোতে পারেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা। প্রদীপ অটিজ়ম সেন্টারের ডিরেক্টর মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য এলাকায় বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে তাঁরা সহজে স্বাবলম্বী হতে পারেন। তাঁর কথায়, “প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় দেখি, হরেক জিনিসের দোকান খুলছে। পুরসভার তরফে কি বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের তৈরি জিনিস বিক্রির ব্যবস্থা করা যায় না? প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাঁদের তৈরি জিনিস বিক্রির জায়গা থাকলে কিছু রোজগারও হয়।”

প্রশ্ন হল, পুরপ্রতিনিধিদের কত জন প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে সচেতন বা মনোযোগী? অলোকের প্রশ্ন, “কাউন্সিলরেরা কি আদৌ জানেন যে, তাঁদের এলাকায় কত জন প্রতিবন্ধী আছেন? তাঁদের প্রতিবন্ধকতা ঠিক কী ধরনের?” আবার ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটা শুনলে অনেকেরই মনে আসে, দৃষ্টিহীন, মূক ও বধির বা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কথা। কিন্তু বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধীদের কথা ক’জনই বা জানেন? অদিতি বলেন, ‘‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের নিয়ে এলাকার একটি মেলায় যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু ভিড়, জোরালো আওয়াজে অনেক বাচ্চারই অসুবিধা হয়। কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানানোয় তিনি এক দিন ভিড় সামলে ওদের মেলা ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করে দেন।”

কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেই কেন বিশেষ নাগরিকদের কথা মনে করাতে হবে?মল্লিকা বলেন, “যে সব এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সচেতনতামূলক কাজ করে, পুরপ্রতিনিধিকে অনুরোধ করে বিশেষ ব্যবস্থা করতে পেরেছে, শুধু সেই এলাকাই কিছুটা সচেতন হয়েছে।”

আর কতগুলো নির্বাচন পেরোলে জনপ্রতিনিধিরা বিশেষ নাগরিকদের বিষয়ে সত্যিই সচেতন হবেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement