প্রতীকী ছবি।
সবুজ বাজি নিয়ে বিতর্ক চলছেই। বাজি বাজারেও আসল সবুজ বাজির পরিবর্তে জাল বাজি বিক্রি হচ্ছে বলে সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। এ বার সেই বিতর্কে আলাদা মাত্রা যোগ করল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বক্তব্য।
সবুজ বাজি নিয়ে পর্ষদের বক্তব্য, কোনও বাজিই সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত নয়। যে সবুজ বাজি নিয়ে এত চর্চা চলছে, সেই বাজির দূষণের মাত্রা প্রচলিত বাজির থেকে ৩০ শতাংশ কম। পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র শুক্রবার এর পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘‘সবুজ বাজিতেও ৭০ শতাংশ দূষণ হয়। সমাজের সব স্তরের কাছে আবেদন, দীপাবলিকে আত্মঘাতী উৎসবে পরিণত করবেন না। কারণ, যে কোনও ধরনের বাজিতে ব্যবহৃত উপাদানই মানুষ তো বটেই, জীবজগতেরও অপরিসীম ক্ষতি করে।’’
ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সবুজ বাজি সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান এমনটা হওয়া সত্ত্বেও কেন সেই বাজির পক্ষে প্রচার করছে পর্ষদ? যেমন, এ দিনই পর্ষদ আয়োজিত এক বৈঠকে উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তার বক্তব্য, ‘‘মনে হচ্ছে রাজ্য সরকার কোথাও বাজি নিয়ে সমঝোতা করছে। না হলে কেন বাজি পুরো নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না?’’ পর্ষদের কর্তাদের অবশ্য বক্তব্য, সবুজ বাজি নিয়ে তাঁরা শুধু সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ পালন করছেন।
এ দিন দু’দফায় আলোচনা করে পর্ষদ। একটি বৈঠক হয় স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে। অপরটি কলকাতা, হাওড়া, বিধাননগর, ব্যারাকপুর, চন্দননগর-সহ একাধিক পুলিশ কমিশনারেট, আবাসন কর্তৃপক্ষ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা-সহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে। তবে দু’দফার বৈঠকেই সবুজ বাজি নিয়ে চার দিকে যে বিভ্রান্তি চলছে, সে প্রসঙ্গও উঠে আসে। যেমন ভাবে উঠে আসে কলকাতা পুলিশ স্বীকৃত বাজি বাজারে নকল সবুজ বাজিবিক্রির প্রসঙ্গও। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘বাজি বাজারে সব মোটেই সবুজ বাজি নয়। কারণ, এত সবুজ বাজি এল কোথা থেকে? এটা তো আদালতের নির্দেশের পুরোপুরি অবমাননা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ করতেই হবে।’’
পর্ষদ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার কিলোগ্রাম বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত এবং প্রায় ৫০ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও ৮৮টি মামলা রুজু হয়েছে।
কী ভাবে আসল সবুজ বাজি চেনা যাবে, সে প্রসঙ্গে এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর (নিরি) প্রতিনিধি দীপাঞ্জন মজুমদার জানান, বাজির প্যাকেটে একটি কিউআর কোড থাকে। কিন্তু সেই কোড স্ক্যান করাটাই পর্যাপ্ত নয়। সেটায় নিরি কর্তৃপক্ষের সই করা ‘এমিশন’ শংসাপত্র রয়েছে কি না, তা দেখতে হবে। দীপাঞ্জনের কথায়, ‘‘কারণ, কিউআর কোডও জাল হচ্ছে। ফলে নিরির এমিশন রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হয়ে তবেই কিনুন। তবে শব্দবাজি কখনওই কিনবেন না। কারণ, ৯০ ডেসিবেলের কম কখনওই শব্দবাজি হয় না।’’