West Bengal Municipal Election 2020

ভোট আসে-যায়, ঘোচে না ‘জঞ্জালনগরী’ তকমা

পাঁচ বছর পেরিয়ে ফের দোরগোড়ায় আরও একটি পুর ভোট। এখনও পর্যন্ত ওই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা যায়নি।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ০৩:০৫
Share:

স্তূপীকৃত: বিডন স্ট্রিটে উপচে পড়ছে খোলা ভ্যাট। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

শহরের কোন রাস্তা বা এলাকায় আবর্জনা জমে রয়েছে, তা দেখা যাবে পুর ভবনে বসেই কম্পিউটারের পর্দায় চোখ রেখে। ২০১৫ সালের কলকাতা পুর ভোটের আগে তেমনই লেখা হয়েছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে। সেখানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, উত্তরে সিঁথি থেকে দক্ষিণে জোকা, পূর্বে বাইপাস থেকে পশ্চিমে গঙ্গার পাড় পর্যন্ত শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডে বসানো হবে তিন হাজার নজর-ক্যামেরা। সেই প্রযুক্তির জোরেই পুর ভবনে বসে দেখা যাবে, শহরের কোথায় জঞ্জাল জমে রয়েছে।

Advertisement

পাঁচ বছর পেরিয়ে ফের দোরগোড়ায় আরও একটি পুর ভোট। এখনও পর্যন্ত ওই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা যায়নি। তবে পুরকর্তাদের দাবি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা কলকাতা পুরসভা। তাঁদের যুক্তি, বছর দশেক আগেও বিভিন্ন স্থানে স্তূপীকৃত হয়ে থাকা জঞ্জাল কলকাতা শহরকে ‘জঞ্জালনগরী’ বলে পরিচিতি দিয়েছিল। যত্রতত্র উপচে পড়া আবর্জনার ফলে শুধু যে পরিবেশ দূষিত হত তাই নয়, দুর্ভোগ পোহাতে হত বাসিন্দাদেরও। পাঁচ বছর আগের ইস্তাহারে বলা হয়েছিল, জঞ্জালনগরীকে আগামী পাঁচ বছরে পরিণত করা হবে পরিচ্ছন্ন নগরীতে। এখন জঞ্জাল জমে থাকার সেই দৃশ্য অনেক কম চোখে পড়লেও তা যে পুরোপুরি নির্মূল হয়েছে, তেমন বলা যাবে না।

সম্প্রতি উত্তর কলকাতার রাজাবাজারে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার ধারে জমে আছে জঞ্জাল। মানিকতলা থেকে বিডন স্ট্রিটে ঢুকে নজরে পড়ল, উপচে পড়ছে গোটা চারেক ভ্যাট। ওই এলাকার একটি স্কুলের পাশেও একই অবস্থা। স্থানীয় বাসিন্দা তপন দত্ত বললেন, ‘‘মাঝেমধ্যে ভ্যাট পরিষ্কার হয়। আবার আবর্জনা জমে যায়। স্থায়ী কোনও সমাধান দরকার।’’

Advertisement

একই ছবি দক্ষিণ কলকাতায়। সম্প্রতি যা চাক্ষুষ করেছিলেন খোদ মেয়র ফিরহাদ হাকিম। গত পয়লা মার্চ দক্ষিণ কলকাতার একাধিক এলাকা ঘুরে তাঁর চোখে পড়ে, বেশ কিছু জায়গায় জমে রয়েছে জঞ্জাল। অনেক জায়গায় রাস্তার ধারে মজুত করে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। তার উপরেও ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। জঞ্জাল ফেলা থেকে রেহাই পায়নি রেলের জমিও।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, কলকাতা পুরোপুরি ভাবে পরিচ্ছন্ন নগরী হতে পারছে না কেন? এমনকি, শহরের কোথায় জঞ্জাল জমে রয়েছে তা পুর ভবনে বসেই কম্পিউটারে দেখা যাবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হল না কেন? জবাবে এক পুরকর্তা জানান, ২০১৫ সালের ওই ইস্তাহার তৈরি হয়েছিল একটি সংস্থার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে। পুরসভাকে তারা জানিয়েছিল, যতগুলি ক্যামেরা লাগবে, তারাই তা সরবরাহ করবে। কিন্তু পরে সেই ক্যামেরা আসেনি। ফলে ওই কাজও হয়নি।

পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘কলকাতার মতো এত বড় শহর সব সময়ে পরিচ্ছন্ন রাখা খুব কঠিন। তবে সকলের আগে শহরবাসীকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশের সব চেয়ে বড় শত্রু প্লাস্টিক, তা জেনেও আমরা প্লাস্টিক ব্যবহার করছি। যেখানে-সেখানে তা ফেলছি।’’ তিনি জানান, বর্তমানে শহরে ১১০টি কম্প্যাক্টর স্টেশন গড়া হয়েছে। কাজ করছে আড়াইশো কম্প্যাক্টর মেশিন। সকাল থেকে রাত, তিন বার জঞ্জাল সাফাই করানো হচ্ছে। তার পরেও জঞ্জাল জমে থাকার অভিযোগ আসছে। ব্যাটারিচালিত গাড়ি দিয়ে জঞ্জাল তোলার কাজ শুরু হয়েছে। ২৭টি ওয়ার্ডে চালু হয়েছে পচনশীল এবং অপচনশীল বর্জ্য পৃথকীকরণ। এর জন্য বাড়ি বাড়ি বালতি দেওয়া হয়েছে। দেবব্রতবাবুর দাবি, শীঘ্রই জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার কাজে আরও গতি আসবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement