পিপিই পরে প্রতিমা বরণ। ছবি: পিটিআই।
কোথাও পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পরে চলছে ঠাকুরবরণ। কোথাও বা মণ্ডপ চত্বরেই প্রতিমাকে গলিয়ে ফেলা হচ্ছে পাইপের তীব্র জলের তোড়ে। করোনা পরিস্থিতিতে এ বার বিজয়া দশমীতে এমন ছবিই দেখা গেল কলকাতায়। অন্যান্য বছরের থেকে এ দৃশ্য একেবারেই আলাদা। আলাদা আরও অনেক ক্ষেত্রে। হাইকোর্টের নির্দেশে এ বার সিঁদুরখেলা নেই মণ্ডপে। নেই শোভাযাত্রা করে প্রতিমা নিয়ে বেরনো। বন্ধ ডিজে এবং মাইক। এমন আবহেই সোমবার দেবীবরণের পর শহরের মণ্ডপে মণ্ডপে, গঙ্গার ঘাটে শুরু হয়েছে প্রতিমা বিসর্জন। ঘাটগুলিতে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় ভিড়ও নেই তেমন। হাজির থাকাদের সকলের মাস্ক বাধ্যতামূলক। বিজয়া দশমীর চেনা ছবিটা এ বার একেবারেই উধাও।
এ দিন সকাল থেকেই গঙ্গার ঘাটগুলিতে পুলিশের কড়াকড়ি চোখে পড়ার মতো। তিন হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের পর গঙ্গার দূষণে লাগাম টানতে পুরকর্মীরাও তৎপর। ভাসানের পর সঙ্গে সঙ্গে নদী থেকে কাঠামো-ফুল এবং অন্যন্য সামগ্রী তুলে ফেলা হচ্ছে। বিসর্জনের সময় ঘাটে চার-পাঁচ জনের বেশি কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সর্ব ক্ষণ নজরদারি চালাচ্ছে রিভার ট্রাফিক পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। স্পিডবোর্ডেও চলছে নজরদারি। প্রতিমা বিসর্জনে নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে এ দিন দুপুরে ঘাটগুলি পরিদর্শন করেন পুর ও নগরন্নোয়মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেন।
প্রতিমা বিসর্জন পরিদর্শনে ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব চিত্র।
ঠাকুরপুকুরের এসবি পার্ক পুজো মণ্ডপে এ বার প্রতিমা বরণে বিশেষ সতর্কতা। এলাকাবাসীদের বর্মবস্ত্র পরে ঠাকুরবরণ করতে হয়েছে। সিঁদুরখেলা নয়, সেখানে ধুনুচি নাচে বিদায় জানানো হয়েছে দুর্গাকে। করোনা আবহে গঙ্গায় গিয়ে ভাসান দেওয়ার পরিবর্তে দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজো মণ্ডপেই প্রতিমাকে জল দিয়ে গলিয়ে ফেলা হচ্ছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার ২৪টি ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন চলবে। এ দিন দেড় হাজারের আশপাশে প্রতিমা বিসর্জনের কথা রয়েছে।
ঠাকুরপুকুর এসবি ক্লাবে পিপিই কিট পরে বিসর্জন।
দুপুরের পর থেকে ঘাটগুলিতে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যস্ততা। আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিসর্জনের অনুমতি দেওয়া হলেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারোয়ারি পুজো উদ্যোক্তা এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বেশ কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছিলেন। শোভাযাত্রা, কার্নিভাল এবং ভাসানের সময় ভিড় করতে বারণ করেন তিনি। হাইকোর্টের নির্দেশে পুজোমণ্ডপে দর্শকদের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা ছিল।
আরও পড়ুন: মণ্ডপ চত্বরে কৃত্রিম জলাধার, করোনা রুখতে অভিনব বিসর্জন ত্রিধারার
আরও পড়ুন: গভীর সঙ্কটে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ভেন্টিলেশনে রাখার চিন্তাভাবনা
গঙ্গার ঘাট, শহরের বড় বড় জলাশয় এবং ঝিলে চলছে বিসর্জন।ছবি: পিটিআই।
বারোয়ারি পুজো উদ্যোক্তারা ভাসানের সময় নিয়ম মানছেন কি না, প্রতিটি থানার পুলিশ আধিকারিকেরা তা খতিয়ে দেখছেন। শুধু গঙ্গার ঘাটগুলিতেই নয়, শহরের বড় বড় জলাশয় এবং ঝিলেও চলছে বিসর্জন। একসঙ্গে যাতে ক্লাবগুলি প্রতিমা বিসর্জনে ভিড় না করে, তার জন্য থানার তরফে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি থানা এলাকায় কোন ক্লাব, কোন দিন বিসর্জন দেবে, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে আগে থেকেই। ঘাটগুলিতে নজরদারিতে রয়েছেন ডেপুটি কমিশনার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসারেরাও।