সুরক্ষিত: ছটপুজোয় রবীন্দ্র সরোবরে ঢোকা আটকাতে বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা হয়েছে একটি প্রবেশপথ। শুক্রবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে ছটপুজো নিষিদ্ধ। আদালতের নির্দেশ মেনে চলতে আজ, শনিবার বিকেলের পর থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত দুই সরোবর বন্ধ রাখছে প্রশাসন। এর জন্য শুক্রবার থেকেই রবীন্দ্র সরোবরে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। কেএমডিএ-র এক শীর্ষ আধিকারিক এ দিন বলেন, ‘‘রবীন্দ্র সরোবরের ১২টি গেট রয়েছে। প্রতিটি প্রবেশপথে বাঁশের ব্যারিকেড করে টিন দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। সরোবরের চার দিকে ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে মোতায়েন থাকবে বিরাট পুলিশবাহিনী। এ ছাড়া, গোবিন্দপুর রেল কলোনির দিকেও রেল পুলিশ মোতায়েন থাকবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, রবীন্দ্র সরোবর এলাকা সংলগ্ন পাঁচটি ওয়ার্ডে (৬৮, ৮৫, ৮৮, ৯৩ ও ৯৪) কৃত্রিম জলাশয়ের ব্যবস্থা থাকছে। পুরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, রবীন্দ্র সরোবরের বিকল্প হিসাবে ওই সমস্ত কৃত্রিম জলাশয়ে পুণ্যার্থীদের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা থাকছে। শৌচালয়, পোশাক পরিবর্তনের জায়গা, পর্যাপ্ত আলো ছাড়াও পুজোর উপকরণ ফেলার জন্য নির্দিষ্ট পাত্র থাকবে সেখানে। কলকাতা পুরসভা এলাকায় ছটপুজোর জন্য কেএমডিএ-র তরফে ৪৭টি ঘাট এবং পুরসভার তরফে গঙ্গার ঘাট ও কৃত্রিম পুকুর মিলিয়ে ১৩৮টি ঘাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পুরসভা ও কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ঘাটে নিরাপত্তার জন্য ডুবুরি, নৌকার ব্যবস্থা থাকছে। পুলিশের সঙ্গেই মোতায়েন থাকবেন বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দু’জন করে কর্মী। ১৮টি গঙ্গার ঘাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন ঘাটে পর্যাপ্ত আলো, পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে। দইঘাট ও তক্তাঘাটে প্রতি বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যান। তার জন্য ওই দুই ঘাটে মঞ্চ তৈরি করে বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। পূর্ত দফতরের তরফে বিভিন্ন ঘাটে ব্যারিকেড তৈরি করা হবে। গঙ্গায় নিরাপত্তা ও নজরদারির দায়িত্বে থাকবে কলকাতা বন্দর ও ভারতীয় নৌবাহিনী। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদের সঙ্গে থাকবে একটি করে নৌকা। যাতে করে তাঁরা টহল দেবেন। এ ছাড়া, বাজেকদমতলা ঘাট এবং রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের জেটিতে থাকবে বিশেষ বাহিনী।
দুই সরোবরে যাতে কেউ ছটপুজো না করেন, তার জন্য দিন দুয়েক আগে থেকে ট্যাবলোয় প্রচার চলছে বলে জানিয়েছেন কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা। সচেতনতা বাড়াতে পথনাটিকারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুভাষ সরোবরেও পাঁচটি গেটে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, নির্বিঘ্নে ছট পালনের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন থাকবেন শহর জুড়ে। নিরাপত্তার জন্য শহরে রবিবার থেকে ১৭০টি পুলিশ-পিকেট তৈরি থাকবে। প্রতি বছরই ছটপুজো উপলক্ষে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানো এবং ডিজে বক্স বাজানোর অভিযোগ ওঠে। এ বার শোভাযাত্রা হলে যাতে ডিজে বা বড় বড় বক্সে গান বাজানো না হয়, তা দেখার জন্য বাহিনীকে বলা হয়েছে।
পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, গত বছরে দুই সরোবরে অনেকটাই বিধি মানা হয়েছে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘গত বছরের মতো এ বারেও প্রশাসন আদালতের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য হবে, এটাই আশা করি।’’