হাঁসফাঁস: তীব্র গরমে হাতপাখাই ভরসা। সোমবার, ময়দানে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
আষাঢ়ের প্রথম দিন নিয়ে বাঙালির যতই আবেগ থাক, চলতি বছরের আষাঢ় মাসে আশাভঙ্গ হল কলকাতার। কারণ, গত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ‘রুখাশুখা’ আষাঢ় হল এ বছরেরই। যেখানে বৃষ্টির ঘাটতির পরিমাণ ৭১ শতাংশ! এমনই জানাচ্ছে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য। এ-ও জানা যাচ্ছে, এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতি মেটার মতো যত বৃষ্টি প্রয়োজন, তার কোনও সম্ভাবনা আপাতত নেই। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে এই ৭১ শতাংশের ঘাটতি মিটবে না।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, গত দশ বছরের মধ্যে ১৫ জুন-১৫ জুলাই, এই এক মাস সময়সীমায় কলকাতা শহরে সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল ২০১৭ সালে, ৫২৭.৯ মিলিমিটার। আর ওই একই সময়সীমায় সবথেকে কম বৃষ্টি হয়েছে গত এক মাসে, মাত্র ১০৩.৬ মিমি। আবহবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, অনেক কষ্ট করে এ বার তবু ১০০ মিলিমিটারের মাত্রা ছুঁয়েছে আষাঢ়ে-বর্ষা। যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ৩৫২.৪ মিমি!
আবহবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, এমন নয় যে এর আগে বর্ষার মরসুমের প্রথম দফায় বৃষ্টির ঘাটতি হয়নি। আষাঢ় মাসে বরাবরই শ্রাবণের তুলনায় কম বৃষ্টি হয়। যেমন, চলতি বছর বাদ দিয়ে গত দশ বছরের মধ্যে আরও পাঁচ বছর স্বাভাবিকের চেয়ে কমই বৃষ্টি হয়েছে কলকাতায়। ২০১০ (ঘাটতি ১১ শতাংশ), ২০১২ (ঘাটতি ৩৭ শতাংশ), ২০১৩ (ঘাটতি ৮ শতাংশ), ২০১৬ (ঘাটতি ৫৫ শতাংশ) ও ২০১৮ সালে (ঘাটতি ২ শতাংশ) বর্ষার প্রথম মাসের বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কম ছিল। কিন্তু কখনও সেই ঘাটতি ৭০ শতাংশ ছাড়ায়নি। এক আবহবিদের কথায়, ‘‘বর্ষার মরসুমের শুরুতে বৃষ্টির পরিমাণ সাধারণত কম থাকে। তা বলে এই পরিমাণ ঘাটতি! এখনও পর্যন্ত এমন একটা স্পেল পাওয়া যায়নি যাতে এই ঘাটতি মেটে।’’
এক দশকের বৃষ্টি
(১৫ জুন – ১৫ জুলাই)
• ২০১০ ২৯৫
• ২০১১ ৪৭১.২
• ২০১২ ২০৮.৬
• ২০১৩ ৩০৭
• ২০১৪ ৪৪৫
• ২০১৫ ৫১০.৯
• ২০১৬ ১৫৭.৩
• ২০১৭ ৫২৭.৯
• ২০১৮ ৩৪৪.৭
• ২০১৯ ১০৩.৬
বৃষ্টির পরিমাণ মিলিমিটারে
সূত্র: আলিপুর আবহাওয়া দফতর
আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, বৃষ্টির দিক থেকে ‘চ্যাম্পিয়ন’ ছিল ২০১১, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সাল। ওই চার বছর ব্যাট চালিয়ে ভালই রান তুলেছিল বৃষ্টি। ওই ক’বছরে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টিই হয়েছিল। আবহবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, এমনিতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পাল্টায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের মাত্রা। ‘ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন’ (ডব্লিউএমও)-এর যে মাপকাঠি রয়েছে, তার উপরে ভিত্তি করেই দীর্ঘ মেয়াদে সংগৃহীত বৃষ্টি-তথ্যের মাধ্যমে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের মাত্রা নির্ধারিত হয়। যেমন ২০১০ সালে যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের মাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩২.১ মিমি, সেখানে ২০১৫ সালের পর থেকে ওই মাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫২.৪ মিমি। যদিও আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছেন, ‘‘স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কী মাত্রা ধরা হল, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওই মাত্রার থেকে কত কম বা বেশি বৃষ্টি হচ্ছে, সেটা বিচার করা।’’
কিন্তু এ বছরের আষাঢ়ে আশাভঙ্গ কেন হল শহরবাসীর?
গণেশবাবু জানাচ্ছেন, বঙ্গোপসাগরের উপরে এখনও তেমন নিম্নচাপের সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়নি। সেই সক্রিয়তা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ভাল বৃষ্টিরও আশা তেমন নেই। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এতটা ঘাটতি মেটার জন্য যে পরিমাণ বৃষ্টি দরকার, তা এখনই দেখা যাচ্ছে না। পরপর ভাল বৃষ্টি হলেই কিন্তু আবার ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।’’
ফলে ‘ভাল’ বৃষ্টির জন্য আপাতত শ্রাবণের উপরেই বাজি ধরছে কলকাতা!