ঢেউ: অল্প বৃষ্টিতেই জল থইথই রাস্তা। বৃহস্পতিবার বিকেলে, ভিআইপি রোডে। ছবি: শৌভিক দে
তিরিশ বছর আগে আজকের দিনে, অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল কলকাতায়। তার পরিমাণ ছিল ৩৬৯.৯৯ মিলিমিটার। এমনটাই জানাচ্ছে কলকাতা পুরসভা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনের করা যৌথ সমীক্ষার তথ্য।
তিন যুগ পরেও অবশ্য পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। বরং কলকাতা ক্রমশ বন্যাপ্রবণ হয়ে উঠেছে। এমন আশঙ্কাই ধরা পড়েছে পরিবেশবিদ ও গবেষকদের একাংশের মধ্যে। তিন বছর আগে করা বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, বিশ্বে বন্যাপ্রবণ শহরগুলির মধ্যে কলকাতা রয়েছে তৃতীয় স্থানে। কেরল বা চেন্নাইয়ের মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন না হলেও এ শহরের বন্যাপ্রবণতা নিয়ে সকলেই মোটামুটি একমত।
এক দিকে শহরে বর্ষার চরিত্র পাল্টে যাওয়া, গড় তাপমাত্রার ক্রমশ বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন-সহ একাধিক কারণ যেমন কলকাতার বন্যাপ্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে, তেমনই বাতাসে দূষণের পরিমাণ শহরকে বন্যার মাপকাঠিতে ক্রমশ বিপজ্জনক করে তুলছে বলেই জানাচ্ছেন পরিবেশবিদ-গবেষকদের একাংশ। ইউনিসেফের প্রাক্তন ‘সিনিয়র কনসালট্যান্ট’ ও কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র পরিবেশ সেলের প্রাক্তন ডিরেক্টর, ভূপদার্থবিদ তাপসকুমার ঘটক বলেন, ‘‘কলকাতা নতুন ভাবে বন্যাপ্রবণ হয়নি। কলকাতা যে বন্যাপ্রবণ, একাধিক রিপোর্টে তা দেখা গিয়েছে। তবে কলকাতার বন্যার চরিত্র আলাদা। গঙ্গায় জোয়ার এলে কলকাতাকে পরিবেষ্টিত করে যে খালগুলি আছে, তাতে জল জমে যায়। ফলে জল বেরোতে পারে না।’’
আরও পড়ুন: বিশ্বের বৃহত্তম পাখির শিরোপা পেল ‘টাইটান’
এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘পূর্ব দিকে যেখানে শহর ক্রমশ ঢালু হয়েছে, সেখানেও বসতি গড়ে উঠেছে। ফলে শহরের অভ্যন্তরীণ জল বেরোনোর পরিকাঠামোর উপরে চাপ বাড়ছে।’’
তবে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের পয়লা জুন থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শহরে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা স্বাভাবিকের থেকে কম। আবহাওয়া দফতরের সূত্র অনুযায়ী, এ দিন পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল ১২৪৫ মিলিমিটার। সেখানে বৃষ্টি হয়েছে ১২১৭ মিলিমিটার। আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, ‘‘স্বাভাবিকের থেকে দুই শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে এখনও পর্যন্ত। গত বছরে স্বাভাবিকের থেকে তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়েছিল। তবে কলকাতার বন্যাপ্রবণতা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’’
শহরে জল জমা ও বন্যার আগাম পূর্বাভাস পেতে এ বার প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে পুরসভা। বৃহস্পতিবার সেই প্রযুক্তিরই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ওই প্রযুক্তিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের আর্থিক সহযোগিতায় পুরসভার পাম্পিং স্টেশন, গুরুত্বপূর্ণ মোড়, স্কুল, খাল-সহ শহরের মোট ৪৫৫টি জায়গায় ‘আলট্রাসনিক সেন্সর’ বসানো হবে। সেই ‘সেন্সর’-এর মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বোঝা সম্ভব হবে, কোথায় কত জল জমে আছে, পাম্পিং স্টেশনগুলি ঠিকমতো কাজ করছে কি না। সেই সঙ্গে জানা যাবে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা-সহ পরিবেশের নানা তথ্য।
শুধু বর্ষার সময়েই নয়, সারা বছর ধরেই ওই প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য পাওয়া সম্ভব। উদ্বোধনে উপস্থিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ‘কান্ট্রি ডিরেক্টর’ কেনিচি ইয়োকোহামাও বলেন, ‘‘একাধিক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, কলকাতা বন্যাপ্রবণ। মোবাইলে আগাম সতর্কবার্তা গেলে সকলে সাবধান হতে পারবেন। তাই এই প্রযুক্তি চালু করা হচ্ছে।’’ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ৩৯টি জায়গায় সেন্সর বসানো হয়েছে। বাকি জায়গায় চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই বসানো হবে।
দেশের মধ্যে কলকাতাতেই প্রথম এই প্রযুক্তি চালু করা হল।’’ ওই প্রযুক্তি তিন-চার মাসের মধ্যে সাধারণ নাগরিকেরাও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ডাউনলোড করতে পারবেন বলে পুরসভা সূত্রে খবর।