—ফাইল চিত্র।
স্তনের টিউমার বা স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা জেলা স্তরেও পৌঁছে দিতে পদক্ষেপ করল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তার প্রথম পর্বে পাঁচটি জেলাকে (স্বাস্থ্য জেলা-সহ) বেছে নিয়ে ৩০ জন চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর পরে স্তন সংক্রান্ত রোগ চিহ্নিত করার কাজে আশা এবং এএনএম (অক্সিলিয়ারি নার্স মিডওয়াইফ) কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পুরো প্রকল্পের উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে থাকবে এসএসকেএম হাসপাতাল।
‘ন্যাশনাল নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়’-এর অধীনে যে ছ’টি রোগের চিকিৎসায় জোর দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে স্তন ক্যানসার, মুখ ও জরায়ুর ক্যানসার, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক স্বাস্থ্য। ‘ন্যাশনাল ব্রেস্ট স্ক্রিনিং কমিটি’র সুপারিশ রয়েছে, ৩০ বছরের বেশি বয়সি মহিলাদের পাঁচ বছর অন্তর স্তন পরীক্ষা করাতে হবে। বাড়ি-বাড়ি ঘুরে নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়-এর সমীক্ষা করার সময়েই আশাকর্মীরা খোঁজ নিয়ে থাকেন, কারও স্তনে টিউমারের মতো শক্ত কিছু দেখা দিচ্ছে কি না। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকতে না চেয়ে জেলা স্তরেও স্তনের টিউমার বা ক্যানসারের চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়তে চাইছে রাজ্য। তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে এক প্রশিক্ষণ-কর্মসূচির আয়োজন করে এসএসকেএম। উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী, অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-অধিকর্তা (নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়) শুভ্রাংশু দত্ত এবং পিজি-র অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়।
পিজি-র অ্যানেক্স পুলিশ হাসপাতালে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবে চালু হয়েছে স্তনের রোগের চিকিৎসা ও গবেষণা কেন্দ্র। তার দায়িত্বে থাকা পিজি-র শল্য বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানাচ্ছেন, জেলা স্তরে পরিষেবা চালুর পাইলট প্রকল্পে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ডায়মন্ড হারবার ও ঝাড়গ্রাম থেকে ছ’জন (তিন জন শল্য, দু’জন স্ত্রী-রোগ এবং এক জন অঙ্কোলজিস্ট) করে চিকিৎসককে বাছাই করা হয়েছে। এ দিন তাঁদের স্তন ক্যানসার চিহ্নিতকরণ, পরীক্ষা ও বায়োপ্সির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দীপ্তেন্দ্র বলেন, ‘‘ওই পাঁচটি জেলায় স্তনের চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি হবে। এই চিকিৎসকদের পরে অস্ত্রোপচারের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। তাঁরা ফিরে গিয়ে আশাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন।’’
অজয়বাবু জানান, গ্রামে ও প্রত্যন্ত এলাকায় আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার পাশাপাশি, স্তন পরীক্ষাও করবেন। আবার মহিলাদেরও শেখাবেন, কী করে তাঁরা নিজেরাই বাড়িতে পরীক্ষা করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘‘মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসার বাড়ছে। ধাপে ধাপে সব জেলাতেই ওই চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা হবে। কারও স্তনে টিউমারের মতো কিছু মিললে তাঁকে কমিউনিটি হেল্থ অফিসারের কাছে আনবেন আশাকর্মীরা।’’ প্রয়োজনে ইউএসজি করে দেখা হবে, সেটি সাধারণ টিউমার না ক্যানসার। প্রয়োজনমতো রিপোর্ট পাঠানো হবে জেলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে। দীপ্তেন্দ্রের কথায়, ‘‘শুরুতেই রোগ নির্ণয় জরুরি। তা হলে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সুস্থ জীবন ফিরে পাওয়া ও স্তন বাঁচানো সম্ভব।’’