মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ফাইল ছবি
উত্তরের গ্যালিফ স্ট্রিটের মতো পশুপাখির হাট হবে দক্ষিণেও! শীতে মাসে দু’দিন করে বসতে পারে এই হাট। রবিবার গ্যালিফ স্ট্রিটে পশুপাখির হাটের বাজার কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক রক্তদান অনুষ্ঠানে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের এই ঘোষণার পরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এর ফলে কুকুরের বেআইনি প্রজননের ব্যবসা আরও ফুলেফেঁপে উঠবে— এমনই আশঙ্কা করছেন পশুপ্রেমীরা।
ওই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানান, যাদবপুর এবং টালিগঞ্জের মাঝামাঝি একটি জায়গা নতুন হাটের জন্য দেখা হচ্ছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লিখছেন যে, ‘এমন হাটে কুকুরের বেআইনি প্রজননের সঙ্গে যুক্তদের অনেকেই ব্যবসা করতে যান। শহরে এমন আরও হাট হলে কি প্রকারান্তরে বেআইনি প্রজননকেই উৎসাহ দেওয়া হয় না?’
পশু চিকিৎসকদের একাংশ দীর্ঘদিন ধরেই কুকুরের প্রজননের বেআইনি ব্যবসা নিয়ে সরব। তাঁদের দাবি, ‘অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অব ইন্ডিয়া’র (এডব্লিউবিআই) লাইসেন্স ছাড়া কুকুরের প্রজননের ব্যবসা চালানোর কথা নয়। লাইসেন্স থাকলেও একাধিক নিয়ম মানতে হয়। যেমন, এডব্লিউবিআই-এর নির্দিষ্ট করে দেওয়া খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি, মেয়ে কুকুরটিকে পর পর দু’টি সিজ়নে বা সংশ্লিষ্ট কুকুরটিকে মোট পাঁচ বারের বেশি প্রজননে বাধ্য করানো চলবে না। প্রজননের আগে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। পুরনো কোনও পরীক্ষার রিপোর্ট গ্রাহ্য হবে না। কিন্তু অভিযোগ, বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিছু মানা হয় না। বরং বর্তমানে পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা লাইসেন্সহীন ‘ডগ ব্রিডারদের’ই পশুপাখির হাটে অবাধ যাতায়াত।
এ নিয়ে মন্ত্রীকে বার বার ফোন ও মেসেজ করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ওই অনুষ্ঠানে অরূপের সঙ্গী, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘গ্যালিফ স্ট্রিটের সমিতি এ সব নিয়ে যথেষ্ট কড়া। অরূপ অভিভূত হয়েই ওই কথা বলেছেন। দক্ষিণেও এমন বাজার হলে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’’
ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ‘বাগবাজার শখের হাট ওয়েলফেয়ার ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক অভিজিৎ রায় যদিও সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বলছেন, ‘‘আমাদের সমিতির ৮৫০ জন সদস্যেরই পরিচয়পত্র রয়েছে। ১৪ জনের কুকুর প্রজননের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু বাইরের অনেকেই হাটের দিনে চলে আসেন। ক্রেতারা মূলত তাঁদের দ্বারাই প্রতারিত হন। সমিতির পরিচয়পত্র থাকা কারও থেকে কোনও পোষ্য কিনে সমস্যায় পড়লে সমিতি দেখবে। কিন্তু বেআইনি কিছু ধরা পড়লে সদস্যপদ বাতিল হবে।’’
পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও বললেন, ‘‘এ নিয়ে কোনও সমিতির নজরদারির সেই ক্ষমতা কোথায়? সরকারকেই কড়া নীতি প্রণয়ন করতে হবে। তবে তার পরেও পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা পশুপাখির দোকানগুলিতে নজরদারি করবে কে?’’