নামেনি জল, এখনও ভাসছে বহু পাড়া

বৃষ্টির দাপট কমলেও এখনও বাড়ি-ঘরের সামনে জল জমা থেকে মুক্তি পাননি শহরের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা। মূলত দক্ষিণ কলকাতায় বাইপাসের ধারে এবং বেহালার ১২৫, ১২৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় শনিবারও জল জমে ছিল। তুলনায় শুক্রবারের থেকে কম হলেও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় তাতে যে ব্যাঘাত ঘটছে, তা টের পেয়েছেন ওই সব এলাকার কাউন্সিলরেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৫ ০০:০১
Share:

ভিআইপি রোড

বৃষ্টির দাপট কমলেও এখনও বাড়ি-ঘরের সামনে জল জমা থেকে মুক্তি পাননি শহরের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা। মূলত দক্ষিণ কলকাতায় বাইপাসের ধারে এবং বেহালার ১২৫, ১২৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় শনিবারও জল জমে ছিল। তুলনায় শুক্রবারের থেকে কম হলেও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় তাতে যে ব্যাঘাত ঘটছে, তা টের পেয়েছেন ওই সব এলাকার কাউন্সিলরেরা। একই চিত্র দমদম, লেকটাউন, রাজারহাট এবং হাওড়া শহরেও। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে শনিবার শহরের জলমগ্ন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেছেন একাধিক মেয়র পারিষদ। সঙ্গে ছিলেন পুরসভার নিকাশি দফতরের ডিজিও। যদিও দিনের শেষে মেয়র বলেন, ‘‘পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে। বেশির ভাগ এলাকার জল নেমে গিয়েছে। দু’একটা পকেটে সকালে জল জমে থাকলেও তা নেমে যাচ্ছে।’’ অর্থাৎ, একটানা বৃষ্টির দাপট কমতেই শহরে ‘জমা জলের’ সমস্যা থেকে আপাতত স্বস্তি মিলেছে বলে মনে করছেন মেয়র।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ রাস্তা এবং গলি জলমগ্ন ছিল। শনিবার সেই জল-ছবিতে কিছুটা পরিবর্তন এলেও দক্ষিণ কলকাতায় বাইপাসের ধারে ১০৮, ১০৯ ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকা জলমগ্নই থাকে। সেখানে মার্টিনপাড়া, নয়াবাদ, ভগৎ সিংহ কলোনি, বাঘাযতীন জে এবং আই ব্লক, হোসেনপুর, পূর্বালোক, কালিকাপুর-সহ আরও কয়েকটি এলাকায় জল জমে রয়েছে। বেহালা চড়িয়াল খাল পাড়ের ১২৫ ও ১২৬ ওয়ার্ডের বসুন্ধরা পার্ক, আনন্দনগর-সহ একাধিক এলাকা এবং উত্তর কলকাতার পাইকপাড়ায় বসত এলাকায় জমা জলের জন্য অসুবিধায় রয়েছেন এলাকাবাসীরা।

শুক্রবার শহরে জল জমার চিত্র কপালে ভাঁজ ফেলে দেয় পুর-প্রশাসনের। উত্তর থেকে দক্ষিণে কোথাও হাঁটু, কোথাও বা কোমর জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ঘুম ছুটে যায় কাউন্সিলরদের। তাঁরা নিকাশি দফতরে অভিযোগ জানাতে থাকেন, নিকাশির পলি না তোলার কারণেই এমন অবস্থা হয়েছে। কোথাও বা নিকাশি নালার ব্যবস্থা না থাকার কথাও উঠেছে। এ ছাড়া, গালিপিট পরিষ্কার না হওয়ায় জল বেরোতে পারেনি বলে অভিযোগ।

Advertisement

পাটুলি

কাউন্সিলরদের কাছ থেকে আসা নানা অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার রাতেই মেয়র পারিষদদের সঙ্গে বৈঠক করেন শোভনবাবু। তারই ভিত্তিতে শনিবার সকালে দেবাশিস কুমার, অতীন ঘোষ এবং স্বপন সমাদ্দারকে কয়েকটি এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখার কথা বলেন। সেই মতো এ দিন সকালেই বাইপাসের ধারে একাধিক ওয়ার্ডে যান দেবাশিসবাবু। সঙ্গে ছিলেন ১২ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ। পরিস্থিতির দ্রুত সমাধানের উদ্দেশে নিকাশি দফতরের ডিজিকেও সঙ্গে নেন তাঁরা। এক পুরকর্মী জানান, মেয়র পারিষদেরা বড় গাড়িতে এবং ডিজি ছোট গাড়িতে যাচ্ছিলেন। ভগৎ সিংহ কলোনির কাছে রাস্তায় জমা জলে বড় গাড়ি পেরিয়ে গেলেও ডিজিকে নিয়ে যাওয়া ছোট গাড়ি বেশি ভিতরে ঢুকতে সাহস পায়নি। অর্থাৎ, জলের জন্য ডিজি-র গাড়িও সেখানে পৌঁছতে পারেনি। মেয়র জানান, ওই সব এলাকার কোথাও কোথাও ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি জল এখনও জমে রয়েছে। তবে দ্রুত তা নেমে যাচ্ছে।

বাগুইআটি, দমদম, কেষ্টপুর ও উত্তর দমদমে অনেক বাড়ির একতলায় জল জমে থাকতে দেখা যায়। জমা জলে মাছের সঙ্গে দেখা গিয়েছে ঢোঁড়া সাপও। দক্ষিণ দমদম পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, বাগজোলা খাল জল টানতে না পারলে জলমগ্ন দমদম এলাকার ছবি বদলানো মুশকিল। ওই পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পাম্প অনেক জায়গাতেই বসানো হয়েছে। কিন্তু খালের জল না নামলে কিছু করার নেই।’’ দমদম পার্ক, জ’পুর, পূর্ব সিঁথি, বেদিয়াপাড়া, মতিঝিল, প্রমোদনগর-সহ দমদমের বিস্তীর্ণ এলাকায় এ দিনও জল দাঁড়িয়ে ছিল। দমদমের কয়েকটি জলমগ্ন এলাকা এ দিন ঘুরে দেখেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।

চিনার পার্ক

একই হাল বাগুইআটির সাহাপাড়া, প্রতিবেশীপাড়া, পেয়ারাবাগান, বিদ্যাসাগরপল্লি, দাসপাড়ায়। হলদিরাম, চিনার পার্কেও জল নামেনি। আধিকারিকেরা জানান, জগৎপুরের কাছে বিবি-১ খালের গেটের কাছে আবর্জনা জমে ছিল। সেগুলি সাফ করা হয়েছে। সেচ দফতর অবশ্য দাবি করেছে, আর এক দিনের মধ্যেই ওই সব এলাকার জলমগ্ন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

হাওড়ায় অধিকাংশ এলাকার জল নামলেও নিচু এলাকা বলে পরিচিত ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু জায়গা এখনও জলমগ্ন। শনিবার রাতেও জল নামেনি মহীনাথ পোড়েল লেন, ঘোষপাড়া লেন, কামিনী স্কুল লেন-সহ বেনারস রোডের কিছুটা অংশে। এ দিন জলে ঢুবে ছিল জায়সবাল হাসপাতাল চত্বর। জল ছিল লিলুয়া থানার ভিতরেও। হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) শ্যামল মিত্র বলেন, ‘‘মধ্য হাওড়ার কোথাও সে ভাবে জল জমে নেই। পঞ্চাননতলা, বেলিলিয়াস রোড, টিকিয়াপাড়ায় জল নেমে গিয়েছে। উত্তর হাওড়ার নিচু এলাকায় কিছুটা জল আছে। ওই সব জায়গায় পাম্প চলছে।’’

ছবি: শৌভিক দে ও রণজিৎ নন্দী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement