নষ্ট: সেই চৌবাচ্চা থেকে পড়ে যাচ্ছে জল। নিজস্ব চিত্র
বিশাল চৌবাচ্চা উপচে জল পড়েই চলেছে সারা দিন। অথচ বন্ধ হয় না পাম্প। স্থানীয়েরা বলছেন, সকালে এক ব্যক্তি পাম্প চালু করে যান। তিনিই আবার সন্ধ্যায় পাম্প বন্ধ করেন। মাঝের পুরো সময়টা এ ভাবেই চৌবাচ্চা থেকে জল উপচে ভেসে যায় চারপাশ। দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে এমন ভাবেই অপচয় হচ্ছে জল।
ভবানী ভবনের পিছনে, আলিপুর পুলিশ লাইনের নিউ ব্যারাকের বাঁ দিকে পুলিশকর্মীদের জন্য একটি বিরাট চৌবাচ্চা রয়েছে। সেটির জলেই তাঁরা স্নান সারেন, কাপড় কাচেন। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চৌবাচ্চা থেকে নাগাড়ে জল পড়তে দেখা গেল। তখন অবশ্য পুলিশকর্মীরা কেউই স্নান বা জামাকাপড় কাচাকাচি করছিলেন না।
জল সংরক্ষণ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছেন ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্প। পরিবেশবিজ্ঞানীরা লাগাতার সতর্ক করে চলেছেন এই বলে যে, জলের অপচয় বন্ধ না করলে ভবিষ্যতে শহর কলকাতায় জলসঙ্কট চরম আকার নেবে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ওই সতর্কবার্তা আলিপুর পুলিশ লাইনের কোনও কর্মীর কানে গিয়েছে কি না, সেখানকার নিউ ব্যারাকে এ ভাবে জল অপচয় দেখে সেই প্রশ্ন উঠতে পারে।
চৌবাচ্চা ভরে গেলেও কেন পাম্প বন্ধ করা হয় না? প্রশ্ন করায় আলিপুর পুলিশ লাইন লাগোয়া বস্তির বাসিন্দা, বছর বাইশের এক যুবক বললেন, ‘‘আমরা ছোট থেকে এমনই দেখে আসছি। সকাল দশটা নাগাদ পাম্প চালু হয়। আবার সন্ধ্যায় বন্ধ হয়। মাঝে চৌবাচ্চা থেকে সারা দিন এ ভাবেই জল উপচে পড়ে।’’ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, চৌবাচ্চার জল উপচে নীচে গড়িয়ে বস্তিবাসীদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘বছরের পর বছর এমনই চলছে। জল উপচে পড়ে আমাদের যাতায়াতের রাস্তাও ভিজে থাকে। হাঁটতে অসুবিধা হয়।’’
আলিপুর পুলিশ ব্যারাকের ওই চৌবাচ্চার পাম্প সময় মতো বন্ধ করার দায়িত্ব কার? আধ ঘণ্টা ধরে অন্তত দশ জনকে জিজ্ঞাসা করেও তার উত্তর মেলেনি।
পুলিশ লাইনের ডান দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের পরিবহণের অফিস। জল উপচে পড়লেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? ওই অফিসের কর্তব্যরত কর্মীদের জিজ্ঞাসা করা হলে তিন জন কর্মীর প্রত্যেকেই বললেন, ‘‘আমরাও দেখে আসছি, চৌবাচ্চা থেকে জল গড়িয়ে নীচে পড়ছে। অথচ পাম্প বন্ধ করার দায়িত্ব যে কার, সেটা আমাদের জানা নেই।’’
ওই অফিস থেকে চৌবাচ্চার দূরত্ব মেরেকেটে ৫০ মিটার। প্রত্যেক দিন চোখের সামনে জল পড়ে যেতে দেখলেও তা বন্ধ করার উদ্যোগও কারও তেমন দেখা গেল না। ওই অফিসকর্মীরাও যে যার মতো দায় এড়িয়ে গেলেন। প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ লাইনের এক কর্মী অবশ্য বললেন, ‘‘অজয় নামে এক জন প্রতিদিন সকালে ওই চৌবাচ্চার পাম্প চালু করে ফের বিকেলে এসে সেটি বন্ধ করেন।’’
সারা পুলিশ লাইন চত্বরে অনেক খোঁজাখুঁজি চালিয়েও অজয়ের দেখা মেলেনি। সব শেষে খোঁজ মিলল আলিপুর পুলিশ লাইন এলাকার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত, পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার অনিন্দ্য চন্দের। চৌবাচ্চা থেকে জল উপচে পড়লেও কেন পাম্প বন্ধ করা হয় না? প্রশ্ন করায় অনিন্দ্যবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতাম না! আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। এ বার নিশ্চয় পাম্প বন্ধ করতে উদ্যোগী হব।’’