বৌবাজারে জল দিয়ে জল রুখতে লড়াই সুড়ঙ্গে

বিপর্যয় সামলাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সুড়ঙ্গ-বিশেষজ্ঞ পল ভেরল ছাড়াও অন্য তিন জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের সাহায্য চেয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কেএমআরসিএল।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৫
Share:

মেট্রোর সুড়ঙ্গে চলছে জল আটকানোর লড়াই। ছবি: ফিরোজ ইসলাম।

তারা সুড়ঙ্গ তৈরি করে। এসপ্লানেডে ইস্পাতের কন্টেনার জুড়ে জুড়ে তৈরি সেই সংস্থার বাতানুকূল অফিসে মঙ্গলবার বিকেল ৪টেতেও যেন ঝড় বইছে! আধিকারিকদের ব্যাগ, টুপি, জলের বোতল, চেয়ার— সবই পড়ে আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। রাত্রি জাগরণের মলিনতাটুকু সাফসুতরো করার অবসর পাননি প্রায় কেউই।

Advertisement

এক কোণে গোটা সাতেক কম্পিউটারের মনিটর খোলা। সেই সব মনিটরে চোখ রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ নির্মাতা সংস্থা এবং ওই মেট্রো প্রকল্প রূপায়ণের ভারপ্রাপ্ত সংস্থা কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড বা কেএমআরসিএলের আধিকারিকেরা। প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার দূরে বৌবাজারের কাছে সুড়ঙ্গে তখন জল ঠেকাতে দেওয়াল তৈরির কাজে ব্যস্ত জনা পঞ্চাশ কর্মী ও প্রযুক্তিবিদ। চলছে টানেল বোরিং মেশিন। সেই কাজের খুঁটিনাটি ফুটে উঠছে মনিটরে। সুড়ঙ্গে প্রচণ্ড গুমোট। দুঃসহ আর্দ্রতা। তাই কয়েক ঘণ্টা পরে পরেই ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে কর্মী-অফিসারদের।

কন্ট্রোল রুম থেকে কিছুটা এগিয়ে লোহার সিঁড়ি দিয়ে মাটির প্রায় ৭০ ফুট নীচে নামলে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জোড়া সুড়ঙ্গ। পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত বিশেষ যানে পাঠানো হচ্ছে সিমেন্ট, রড, ফাইবার এবং বিশেষ রাসায়নিক। সুড়ঙ্গের তাপমাত্রা, অক্সিজেনের মাত্রা ঘনঘন মাপছেন সংশ্লিষ্ট কর্মীরা। প্রায় সাড়ে পাঁচ মিটার ব্যাসের সুড়ঙ্গের ধার ঘেঁষে ইস্পাতের জাল পেতে তৈরি করা হয়েছে ফুটখানেক চওড়া পথ। সেই সঙ্কীর্ণ পথে যাতায়াত করছেন সুড়ঙ্গ নির্মাতা স‌ংস্থার কর্মীরা। নাগাড়ে চলা পাম্প বার করে আনছে সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়া জল। তারই মধ্যে চলছে একটি নিশ্ছিদ্র দেওয়াল তৈরির কাজ।

Advertisement

বিপর্যয় সামলাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সুড়ঙ্গ-বিশেষজ্ঞ পল ভেরল ছাড়াও অন্য তিন জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের সাহায্য চেয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কেএমআরসিএল। তিন বিশেষজ্ঞ পৌঁছে গিয়েছেন। আজ, বুধবার চতুর্থ জনের আসার কথা। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই সুড়ঙ্গে জল ঠেকানোর কাজ চলছে। সেই কাজটা হচ্ছে মূলত দু’ভাবে। প্রথমত, টানেল বোরিং মেশিনের সামনের দিকে একটি কংক্রিটের বায়ুনিরুদ্ধ দেওয়াল তৈরি করা হচ্ছে। কিছুটা পিছিয়ে ৭০-৮০ মিটার দূরে গড়া হচ্ছে আরও একটি দেওয়াল। ওই কাজ শেষ হলে তীব্র চাপে মাঝখানের অংশে জল ভর্তি করা হবে। ওই অংশের জলের চাপ উপর থেকে নতুন করে জল ঢোকার সম্ভাবনা রুখবে।

দ্বিতীয়ত, বৌবাজারে মাটির উপর থেকে ফুটো করে সুড়ঙ্গের ছাদের কাছে মাটির গভীরে ঢালা হচ্ছে কংক্রিট এবং বেন্টোনাইটের মিশ্রণ। ওই মিশ্রণ আচ্ছাদনের মতো জলের ঢুকে পড়া ঠেকাবে, ধস ঠেকাতেও সাহায্য করবে। সুড়ঙ্গের দিকে জলস্রোত সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে ফের কাজ শুরু করার কথা বিবেচনা করা হবে। সমস্যা মিটলে নতুন করে টিবিএম ঠিক কোথায় নামানো হবে— শিয়ালদহে নাকি বৌবাজারে, সেটা মেট্রো-কর্তৃপক্ষকে ভাবাচ্ছে। সব মিলিয়ে মেট্রোর কাজ এক বছর পিছিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement