অনিয়ম: মাছ চাষের এই জলাশয়ে নির্মীয়মাণ নর্দমার মুখ (চিহ্নিত অংশ)। জলাশয় রক্ষার আবেদন (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র
জলাশয়ে ডিমপোনা (মাছের ডিম ফুটে পোনা বার করার পর্ব) ফেলে চাষ হয়। অথচ সেই জলাশয়েই নিকাশির জল ফেলা হবে! এর ফলে মাছ চাষে বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মৎস্যজীবীরা। কলকাতা পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাইপাস সংলগ্ন পাটুলির ওই জলাশয় ঘিরে আপাতত পুরসভার সঙ্গে মৎস্য দফতরের চাপানউতোর শুরু হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের দাবি, ওই নিকাশি দিয়ে নোংরা জল বেরোবে না। এই দাবি ভিত্তিহীন বলে জানাচ্ছে মৎস্য দফতর।
রাজ্য মৎস্য দফতর সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে বাইপাসের পাটুলি এলাকার ৩৭টি জলাশয়ে লিজ় নিয়ে মাছ চাষ করছেন বৃজি পাটুলি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ৬৫ জন মৎস্যজীবী। কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের পেট্রোল পাম্পের কাছে প্রায় দু’বিঘা জায়গা জুড়ে থাকা জলাশয়ে নিকাশির জল ফেলা হবে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান গফুর হালদার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ওখানে ডিমপোনা চাষ হচ্ছে। হ্যাচারি থেকে ডিম ফুটে মাছের চারা বেরোতেই পেট্রোল পাম্পের পাশের জলাশয়ে ফেলা হয়।” তাঁর আশঙ্কা, “নিকাশিনালার নোংরা জল পুকুরে পড়লে সব চারা মরে যাবে।’’
একই আশঙ্কার সুর ধরা পড়ল অন্য মৎস্যজীবীদের কথাতেও। তাঁদের কথায়, ‘‘এই জলাশয়ের মাছ কলকাতা-সহ আশপাশের বাজারে বিক্রি হয়। এ ভাবে নিকাশিনালার জল পুকুরে পড়লে ওখানে মাছ চাষে সঙ্কট দেখা দেবে, যার প্রভাব পড়বে বাজারগুলিতে।’’
এ প্রসঙ্গে পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই এলাকায় জল জমার পুরনো সমস্যা রয়েছে। বৃষ্টির জল যাতে দ্রুত বেরিয়ে যায় সে জন্য ওই নালা হচ্ছে। কোনও নোংরা জল বেরোবে না।’’
যদিও এই দাবি মানতে রাজি নন সমবায় সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত মৎস্য দফতরের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক কৃষ্ণেন মুখোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, ওই নিকাশি তৈরি মানেই নিয়মিত এলাকার নোংরা জল পড়বে। ফলে মাছ চাষে সঙ্কট দেখা দেবে। তিনি জানান, পাটুলির ওই জলাশয় নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। জলদূষণ ঠেকাতে নজরদারিও চলে। কৃষ্ণেনবাবুর অভিযোগ, ‘‘ইনল্যান্ড ফিশারিজ অ্যাক্ট লঙ্ঘন করছে কলকাতা পুরসভা। নিয়ম অনুযায়ী, পুকুরের মালিকের অনুমতি ছাড়া মাছ চাষের জলাশয়ে নোংরা জল ফেলা যায় না। অথচ পুরসভা আমাদের অনুমতি না নিয়ে এই কাজ করছে। প্রশাসন দ্রুত নিকাশির কাজ বন্ধ করুক।’’