বেঁকে গিয়েছে টালা ট্যাঙ্কের দেওয়ালের বহু জায়গা।
একেই মাটি থেকে ১১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। তার উপরে ২১৫টি লোহার স্তম্ভের উপরে দাঁড়ানো ট্যাঙ্কটির গভীরতা ২০ ফুট। অত উঁচুতে এমনিই হাওয়ার চাপ বেশি থাকে। আর সেই হাওয়ার চাপেই বেঁকে গিয়েছে টালা ট্যাঙ্কের ভিতরে লোহার দেওয়ালের বহু জায়গা! তেমনটাই ধরা পড়েছে বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে। আপাতত যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে সেই বাঁকা লোহার দেওয়াল ঠিক করার কাজ হচ্ছে। এমন ভাবে সেই কাজ চলছে, যাতে কোনও সময়ে ১৮০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইলে বা ঘূর্ণিঝড় হলেও দেওয়ালের ক্ষতি না হয়।
টালা ট্যাঙ্ক সংস্কারের কাজের ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভাকে সাহায্য করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই উঁচুতে হাওয়ার চাপ বেশি থাকে। টালা ট্যাঙ্কে দু’ভাবে সেই চাপ কাজ করেছে। প্রথমত, ট্যাঙ্ক শূন্য থাকা অবস্থায়। এমন অবস্থায় হাওয়ার গতি বেশি হলে সেই চাপে ট্যাঙ্কের দেওয়াল ভিতরে ঢুকে আসতে চায়। আর দ্বিতীয়ত, ট্যাঙ্ক জল-ভর্তি থাকা অবস্থায়। এই অবস্থায় জোরালো হাওয়ার কারণে ট্যাঙ্কের দেওয়ালের বাইরের দিকে চাপ দেয় জল। ফলে দেওয়াল বাইরের দিকে ক্রমশ বাঁকতে থাকে।
কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভিজ়িটিং প্রফেসর বিশ্বজিৎ সোম বলেন, ‘‘হাওয়ার চাপে ট্যাঙ্কের লোহার দেওয়াল যাতে ভিতরে-বাইরে না বাঁকে, তাই আমরা লোহার পাত দিয়ে মজবুত করার চেষ্টা করছি। সেই কাজ অনেকটাই এগিয়েছে।’’ বিশেষজ্ঞেরা আরও জানাচ্ছেন, দেওয়াল যে হাওয়ার চাপে বাঁকতে পারে, তা আন্দাজ করেছিল ব্রিটিশরাও। কিন্তু ১০৫ বছর আগে তারা যখন ট্যাঙ্কটি তৈরি করেছিল, তখন শুধুমাত্র জল ভর্তি থাকা অবস্থায় হাওয়া চাপ দিলে দেওয়াল যাতে না বাঁকে, তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। গত ১০০ বছর ধরে সেই প্রযুক্তিই কাজ করেছে। কিন্তু বর্তমানে ট্যাঙ্কের ভিতরের ও বাইরের দেওয়াল মজবুত করার কাজ হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন। বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘জলশূন্য অবস্থাতেও হাওয়ার চাপে যাতে দেওয়াল না বাঁকে, আমরা সেই চেষ্টা করছি।’’
ব্যবস্থা: এ ভাবেই মজবুত করা হচ্ছে ট্যাঙ্কের দেওয়াল। নিজস্ব চিত্র
কলকাতা পুরসভার খবর, টালা ট্যাঙ্ক সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে দু’বছর আগে। ট্যাঙ্কের ভিতরে যে চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে, ক্রমান্বয়ে তার একটি বন্ধ করে কাজ করা হচ্ছে। একটি প্রকোষ্ঠের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ। প্রকোষ্ঠের দেওয়াল থেকে মরচে তুলে তাতে রং করা হয়েছে। তার পরে জল ভরে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সংস্কারের কাজ ঠিক মতো হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠের কাজ।
পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, ব্রিটিশরা পরিকল্পনা করেই ট্যাঙ্কের ভিতরে চারটি প্রকোষ্ঠ তৈরি করেছিল যাতে প্রয়োজনে একটি বন্ধ করা হলেও জল সরবরাহ চালু থাকে। এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘জল সরবরাহ বন্ধ না রেখে সংস্কারের কাজ করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জ। একটি প্রকোষ্ঠের কাজ আমরা সে ভাবেই সম্পূর্ণ করেছি। আশা করছি, ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কারের কাজ সম্পূর্ণ হবে।’’