দেওয়াল বলল, তবু ওঁরা স্বপ্ন দেখেন

গ্রাফিক আর্টিস্ট হতে চেয়েও পরিবারের ইচ্ছায় বিয়ে। কেরিয়ারে জলাঞ্জলি। অবসাদ। মৃত্যু। অথবা ব্যবসায়ী পরিবারে বিয়ে, তাই চাকরিতে ইতি। তার পরে নির্যাতন। আর্থিক স্বাধীনতা না থাকায় বাড়ে বিপদ।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

উজ্জ্বল: স্বপ্ন ভরা দেওয়ালে স্বাক্ষর। শনিবার, বালিগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র

কারণ, যাঁরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে যান, বাঁচতেও ভুলে যান তাঁরা!

Advertisement

গ্রাফিক আর্টিস্ট হতে চেয়েও পরিবারের ইচ্ছায় বিয়ে। কেরিয়ারে জলাঞ্জলি। অবসাদ। মৃত্যু। অথবা ব্যবসায়ী পরিবারে বিয়ে, তাই চাকরিতে ইতি। তার পরে নির্যাতন। আর্থিক স্বাধীনতা না থাকায় বাড়ে বিপদ। তার পরে কখন যেন সব শেষ। এমন বহু ঘটনার সঙ্গেই অতি পরিচিত এ শহর। কিন্তু যে ভাবনার সঙ্গে সচরাচর পরিচয় ঘটে না, তা হল স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। অতঃপর যে শহরের অলিগলি প্রায় প্রতিদিন সাক্ষী হয় কোনও এক নারীর আর্তনাদের, সেই কলকাতার বুকেই এক দেওয়াল স্বপ্ন আঁকা হল। তাও আবার নির্যাতিতাদের!

কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে চান, কেউ শিক্ষিকা হতে, কেউ বা চান পুলিশ হিসেবে কাজ করতে। মেটিয়াবুরুজের এক নির্যাতিতা বধূর স্বপ্ন ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। পরিবারে যেটুকু কাজ নিয়মিত করছেন, তার স্বীকৃতি পাওয়াই আবার স্বপ্ন তাঁর বান্ধবীর। দক্ষিণ কলকাতার দেওদার স্ট্রিটের সেই দেওয়াল এখন দুনিয়ার দরবারে তুলে ধরছে নারীমনে লুকিয়ে থাকা এমনই সব বাসনা। সঙ্গে বার্তা দিচ্ছে, নির্যাতনই শেষ নয় জীবনের।

Advertisement

নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই, নির্যাতিতাদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই, নির্যাতিতাদের হয়ে লড়াই— সবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আরও প্রয়োজন নির্যাতিতাদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। স্বপ্ন আঁকা সেই দেওয়াল দেখতে এসে শনিবার মনে করালেন নারীবাদী লেখিকা কমলা ভাসিন। কারণ, স্বপ্ন দেখার অধিকারটুকু বুঝে নেওয়াই বড় লড়াই। শত অত্যাচারের পরেও যে মনের কোণে চুপিসাড়ে লুকিয়ে থাকে হাজার রং, তা বুঝিয়ে দেওয়াই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ।

দুনিয়ার দরবারে স্বপ্ন ফুটিয়ে তোলার পথ তাই সহজ ছিল না এ ক্ষেত্রেও, উদ্যোক্তাদের তরফে জানালেন অনুরাধা কপূর। যাঁদের স্বপ্ন নিয়ে এত চর্চা তাঁদের কাউকে পরিবারের অত্যাচারে ছাড়তে হয়েছে ঘর, কারও বা নির্যাতনে পুড়ে গিয়েছে শরীরের নানা অংশ। এমন সব ক্ষতবিক্ষত মনের ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা স্বপ্নই জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন মৌ, হোসেনারা, সীমা, নাফিসা, সুমিতাদের মতো অনেকে। খাতায়-কলমে তা জানানোর পরে সেই স্বপ্নে পেশাদার ছোঁয়া দিয়েছেন সরকারি আর্ট কলেজের প্রধান শিক্ষক ছত্রপতি দত্ত ও তাঁর ছাত্রছাত্রীরা। দেওয়ালে এখন শৈল্পিক আঙ্গিকে ফুটে উঠেছে তাঁদের স্বপ্নের রং। যে ম্যুরাল দেখে তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘অন্তত ছবিতে তো স্বপ্নপূরণ হল। তা-ই বা কম কী!’’ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এ শহরের বহু জনেরই আশা, এ ভাবেই বহু নির্যাতিতাকে প্রাণশক্তি জোগাবে এই দেওয়ালচিত্র। আর ভ্রমণার্থীদের কাছে তুলে ধরবে কলকাতার ‘অন্য মুখ’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement