বন্‌ধ ‘সফল’ করুন, চোখরাঙানি শহর জুড়ে

যাত্রীদের নামতে বলে বাসে আগুন বেব্রোর্ন রোডে, ধৃত ১

পুলিশ জানায়, এ দিন ব্রেবোর্ন রোডের ওই ঘটনায় খুনের চেষ্টা, ষড়যন্ত্র ও আগুন লাগানোর মামলা রুজু হয়েছে। প্রমোদ দুবে নামে আর এক ব্যক্তিকেও আটক করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২০
Share:

বুধবার দুপুরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল বাসে। প্রাণ বাঁচাতে কোনও মতে জানলা দিয়ে বেরোচ্ছেন এক যাত্রী

দাপট দেখাতে বন্‌ধের দুপুরে ব্রেবোর্ন রোডে যাত্রিবাহী বাসে লাগানো হল আগুন। চালক নেমে গেলে জ্বলন্ত অবস্থাতেই কিছু দূর গড়াতে থাকে বাস। সেই বাসেই আটকে পড়েন আগুন লাগাতে আসা এক বন‌্‌ধ সমর্থক। প্রথমে পুলিশ যাত্রী ভেবে তাঁকে উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। লালবাজারের দাবি, হাসপাতালেই দোষ কবুল করেন সঞ্জীব সিংহ নামে ওই বিজেপি কর্মী। তার পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সঞ্জীবের বাড়ি নৈহাটিতে। তিনি বুধবারই উত্তরপ্রদেশ থেকে শহরে ফেরেন।
পুলিশ জানায়, এ দিন ব্রেবোর্ন রোডের ওই ঘটনায় খুনের চেষ্টা, ষড়যন্ত্র ও আগুন লাগানোর মামলা রুজু হয়েছে। প্রমোদ দুবে নামে আর এক ব্যক্তিকেও আটক করেছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রে খবর, সঞ্জীবকে এ দিন দলের রাজ্য দফতর মুরলীধর সেন লেন থেকে বেরোনো মিছিলে বিজেপি-র প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘ওঁকে চিনিই না। মিছিলে তো কত লোকেই হাঁটেন। কেউ অপরাধ করলে তার দায় কি যাঁর পাশে হেঁটেছেন, তাঁকে নিতে হবে?’’
কলকাতা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘এই ঘটনায় বিজেপি-র শীর্ষ নেতাদের কারও প্ররোচনা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশের দাবি, বিজেপি-র সব মিছিলের ভিডিয়ো রেকর্ডিং তাদের কাছে আছে। তাতে সঞ্জীবের সঙ্গে অন্য নেতাদের গতিবিধিও ধরা প়ড়েছে। এ ব্যাপারে জেরাও করা হচ্ছে তাঁকে।

Advertisement

এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে সঞ্জীব সিংহকে (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

হাওড়া থেকে হরিমোহন ঘোষ কলেজ (গার্ডেনরিচ) যাওয়া সি-৭ রুটের ওই বাসের কন্ডাক্টর বিনোদকুমার সিংহ বলেন, ‘‘সওয়া একটার পরে জনা দশেক যাত্রী নিয়ে হাওড়া স্টেশন থেকে রওনা দিয়েছিলাম। ব্রেবোর্ন রো়ড উড়ালপুল দিয়ে যাওয়ার সময়ে দুই যুবক চলন্ত বাসেই ওঠে। প্রথমেই তারা যাত্রীদের নেমে যেতে বলে। উড়ালপুলের শেষ প্রান্তে বাসটিতে তারা পেট্রোল ছড়িয়ে আগুন লাগিয়ে নেমে যায়।’’ পুলিশ জানিয়েছে, আগুন লাগানো হচ্ছে দেখে যাত্রীদের সঙ্গে বাসের চালক রাধাকান্ত কাণ্ডার এবং কন্ডাক্টরও নেমে যান।

Advertisement

আরও পড়ুন: অবরোধ-অশান্তি-আগুন, বন্‌ধে ঈষৎ থমকাল বাংলা

কিন্তু সঞ্জীব ছাড়াও আর এক জন যাত্রী ভিতরে আটকে পড়েন। পুলিশ ও স্থানীয় শ্রমিকদের একাংশ সেই দু’জনকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারকাজে গিয়ে ভোলা সিংহ, মহম্মদ মুন্না, সন্তোষ সিংহ নামে বড়বাজার এলাকার তিন শ্রমিক, হাওড়া ব্রিজ ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি রাজকুমার সিংহ এবং বীরেশ সামন্ত নামে এক হোমগার্ড জখম হন।

পুলিশের দাবি, উদ্ধারের সময়ে সঞ্জীবের বাস থেকে বেরোনোর ছবিও তাদের কাছে আছে। ভোলা বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি বাস থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কয়েক জন যাত্রী আছেন দেখে বাসে উঠি। কাচ ভেঙে তাঁদের জানলা দিয়ে নামানো হয়।’’ জ্বলন্ত অবস্থাতেও বাসটি কিছু ক্ষণ গড়াতে থাকে। গার্ডরেল, ইট ফেলেও পুলিশ সেটি থামাতে পারেনি। প্রায় ১০০ মিটার পরে একটি গাড়িতে ধাক্কা মেরে থামে বাস। পরে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন আগুন নেভায়। ডিসি (সেন্ট্রাল) শুভঙ্কর সিংহ সরকারের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement