— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
একটি বাইকে তিন জন। কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত অ্যাক্সিলারেটরে চাপ দিয়ে চলেছেন চালক। তাতে এমন আওয়াজ হচ্ছে যে, কান পাতা দায়! আওয়াজ যত তীব্র হচ্ছে, ততই বাড়ছে বাইকের পিছনে বসা দুই আরোহী যুবকের চিৎকার। এ ভাবে কিছু সময় চলার পরে সিগন্যাল সবুজ হতেই তীব্র গতিতে গাড়ির ভিড়ে মিলিয়ে গেল মোটরবাইকটি।
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের এই দৃশ্যের মতোই গোটা শহর জুড়ে নানা ছবি দেখা গেল সোমবার, বড়দিনের রাতে। রাত যত গভীর হয়েছে, ততই বেড়েছে হেলমেটহীন বাইকচালক এবং মত্ত চালকদের দৌরাত্ম্য। লালবাজারের তথ্য অনুযায়ী, হেলমেটহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সংখ্যা গত বছরের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছে। এ বছর বড়দিনে কলকাতা পুলিশ এলাকায় ১৯৯ জন হেলমেটহীন বাইকচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যদিও গত বছর, অর্থাৎ, ২০২২ সালে সেই সংখ্যা ছিল ৬৬। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে হেলমেট না পরা বাইক আরোহীর সংখ্যাও। গত বছর ৪২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হলেও এ বছর সেই সংখ্যা ৯২।
গত বছরের তুলনায় ধরা পড়া মত্ত গাড়িচালকের সংখ্যা কিছুটা কমলেও এ বছরও তা একশো পেরিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ বছর ১০৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। গত বছর সেই সংখ্যা ছিল ১০৯। লালবাজারের বিশেষ অভিযানে ব্যবস্থা নেওয়ার সর্বমোট সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেকটা বেড়ে এ বছর হয়েছে ৫৩২।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দিনভর ধরপাকড়ও করেছে লালবাজার। জানা গিয়েছে, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বড়দিনে ২৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি, ৫১ লিটার মদও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বড়দিনের আগে, অর্থাৎ, রবিবারও পুলিশি অভিযানে ৩২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে জানিয়েছিল লালবাজার। ফলে এই দু’দিনে মোট ৬১৩ জনকে গ্রেফতার করা হল।
উৎসবের দিনে বেপরোয়া যাপনের এই প্রবণতা নতুন নয়। বরং পুলিশের একাংশের ‘নরম মনোভাবে’ বেপরোয়া চালকদের দৌরাত্ম্য প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ। এ বছর বড়দিনেও ই এম বাইপাস, এ জে সি বসু রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-সহ শহরের একাধিক রাস্তায় দেদার বিধি ভাঙার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। মধ্যরাতে পার্ক স্ট্রিটে যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা উঠতেই সেটি প্রমোদভ্রমণের রাস্তা হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। পুলিশের সামনেই বাইকের পিছনে একাধিক জনকে বসিয়ে গতির তুফান তুলতেও দেখা গিয়েছে। একই ছবি ছিল বাইপাসেও।
রাত যত বেড়েছে, ততই রাস্তায় বেড়েছে দু’-চাকার বেপরোয়া গতির দৌরাত্ম্য। তীব্র আওয়াজে গান চালিয়ে গাড়িও ছোটাতে দেখা গিয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন বাইপাসে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশি বিধিনিষেধে এঁদের রোখা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে? রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে বলা হয়েছে, করছি। ক্যামেরা আছে, যা ব্যবস্থা নেওয়ার ওখানেই হবে।’’
এ দিকে, রাতভর শহরের বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ নামিয়ে নজরদারি চালিয়েছে বলে দাবি করেছে লালবাজার। এমনকি, বিধি ভাঙা আটকাতে প্রতিটি ডিভিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলেও খবর। কিন্তু তার পরেও আটকানো গেল না কেন? লালবাজারের এক কর্তা যদিও বলছেন, ‘‘পুলিশের তরফে সব রকম ব্যবস্থা ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো বিধিভঙ্গ হয়েছে। সেই মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’’