Victoria Memorial

সুভাষচন্দ্রের চিঠি নিয়ে ভুল ‘স্বীকার’ ভিক্টোরিয়ার

গত শনিবার ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষকে লেখা চিঠিতে সুগতবাবু প্রশ্ন তোলেন, প্রদর্শনীতে দ্রষ্টব্য সুভাষের আইসিএস থেকে ইস্তফার চিঠির অনুকৃতিটি ভুয়ো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৯
Share:

ফাইল চিত্র।

সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সূচনায় তাঁর আদর্শ তরুণ প্রজন্মের সামনে সহজ ভাবে মেলে ধরতে চেয়েছেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ। সুভাষ-জীবনের ১২৫টি গল্পে আকর্ষক ঢঙে সেই চেষ্টাই করেছে ‘নির্ভীক সুভাষ’ প্রদর্শনীটি। সোমবার নেতাজি রিসার্চ বুরোর চেয়ারপার্সন সুগত বসুকে লেখা চিঠিতে বিশদে এর ব্যাখ্যা করেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সচিব জয়ন্ত সেনগুপ্ত। সেই সঙ্গে প্রদর্শনীটির কয়েকটি দ্রষ্টব্য নিয়ে সুগতবাবুর প্রশ্নেরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

গত শনিবার ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষকে লেখা চিঠিতে সুগতবাবু প্রশ্ন তোলেন, প্রদর্শনীতে দ্রষ্টব্য সুভাষের আইসিএস থেকে ইস্তফার চিঠির অনুকৃতিটি ভুয়ো। এই প্রসঙ্গে ভিক্টোরিয়ার তরফে এ দিন জানানো হয়, এখন সংগ্রহশালায় মূল চিঠির অনুকৃতিটিই প্রদর্শিত হচ্ছে। তবে সাধারণ দর্শকদের পড়ার এবং বোঝার সুবিধার জন্য ওই চিঠির বয়ানের লিপি বর্ধিত রূপে পুনর্নির্মাণের পরে দেখানো হচ্ছে। মহানিষ্ক্রমণের সময়ে সুভাষচন্দ্রের ‘মহম্মদ জিয়াউদ্দিন’বেশী ছবি ভিক্টোরিয়ায় প্রদর্শন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন সুগতবাবু। জয়ন্তবাবুর চিঠিতে বলা হয়েছে, ছবিটি অভ্যুদয় সংবাদপত্রের ১৯৯৮ সালের গ্রন্থাকারে প্রকাশিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই ছবি যে শিল্পীর কল্পনা, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে।

তাঁর চিঠির ভিত্তিতে এই ‘সংশোধনী’র কাজে খুশি সুগতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা ভুলটা কার্যত স্বীকার করেছেন। ব্যবস্থা যে নিয়েছেন, এতে আমি খুশি।’’ তবে তিনি কয়েকটি প্রশ্নও তুলেছেন। সুগতবাবু বলেন, ‘‘নেতাজি রিসার্চ বুরোর ওয়েবসাইট (http://netaji.org/) খুললেই এখন সুভাষচন্দ্রের আইসিএস থেকে ইস্তফার চিঠি দেখা যাচ্ছে। মূল চিঠির অনুকৃতি থেকে নেতাজির হাতের লেখাও সহজে পড়া যায়। সাধারণ দর্শকেরা তা পড়তে পারতেন না, ভাবাটা ঠিক নয়।’’ তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত, বড় করে ফ্রেমে বাঁধানো অবস্থায় সুভাষচন্দ্রের হাতের লেখা রাখলেই ভাল হত।

Advertisement

ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষের তরফে জয়ন্তবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘সারা ভারত থেকে বেশ কিছু নেতাজি-স্মারক বা তার অনুকৃতি, ছবি, চিঠির মতো নথি প্রদর্শনীটির জন্য জড়ো করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য একটাই, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঝকঝকে উপস্থাপনায় তরুণেরা যাতে দেশের জন্য নেতাজির আত্মত্যাগের মহিমা বুঝতে পারেন। এই আন্তরিকতায় খাদ ছিল না। নেতাজিকে নিয়ে এই মাপের প্রদর্শনী আগে করা হয়নি।’’ সুগতবাবুকে লেখা চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, যে সংস্থাটির মাধ্যমে প্রদর্শনীটি সম্পন্ন করা হয়, তারা নেতাজি রিসার্চ বুরো এবং অন্য প্রকাশকদের বই থেকে নথি, ছবি বা তার অনুকৃতি ব্যবহার করেছে। সেই বইয়ের তালিকাও দেওয়া হয়।

নেতাজি ভবনে রক্ষিত আসল চিঠির অনুকৃতি। নিজস্ব চিত্র

সুগতবাবু এ দিন বলেন, ‘‘ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ যে ১০টি বইয়ের তালিকা দিয়েছেন, তার মধ্যে ন’টিই নেতাজি রিসার্চ বুরোর। আর একটি বই আমার লেখা, নেতাজি-জীবনী ‘হিজ় ম্যাজেস্টিজ় অপোনেন্ট’। ওই বইয়ে ব্যবহৃত ছবি, নথির অনুকৃতিও নেতাজি রিসার্চ বুরো সূত্রেই প্রাপ্ত। ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ বা প্রদর্শনীটির আয়োজকেরা যদি প্রদর্শনীটি আয়োজনের সময়েই আমাদের বিষয়টি জানাতেন বা সহযোগিতা চাইতেন, আমরা সানন্দে সব ক’টি ছবি বা নথি আমাদের সংগ্রহ বা ডিজিটাল ভাঁড়ার থেকে প্রদর্শনীতে দেখানোর মতো সর্বোত্তম মানে ওঁদের দিয়ে সাহায্য করতাম। সাধারণত, অন্য যে কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই পারস্পরিক সৌজন্যের ভিত্তিতে নেতাজি-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে আমরা সাহায্য করে থাকি।’’ বিষয়টি ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানাবেন বলেও জানিয়েছেন সুগতবাবু। জয়ন্তবাবুর কথায়, ‘‘অগ্রগণ্য ইতিহাসবিদ সুগতবাবুর চিঠি পেয়ে যত দ্রুত সম্ভব আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। গোটা প্রয়াসেই নেতাজির প্রতি সম্মানে কোনও খাদ ছিল ভাবাটা ঠিক নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement