প্রতিবাদে: পুলিশের সামনেই বৌবাজারে গাড়ি আটকে হুঁশিয়ারি বাম সমর্থকদের। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
শহরের মোড়ে মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি, রাস্তা অবরোধ করে জোর করে বাস থামিয়ে দেওয়া, টায়ার জ্বালানো, দোকান বন্ধ করে দেওয়ার মতো কিছু ঘটনা ঘটলেও নতুন কৃষি আইনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ডাকা ভারত বন্ধ ঘিরে শহরে অশান্তির ঘটনা ঘটল তুলনামূলক ভাবে কমই। দিনের ব্যস্ত সময়েও শহরের কিছু প্রধান
রাস্তায় গাড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো কম। দোকানপাট অবশ্য অনেক জায়গাতেই খোলা ছিল। বন্ধ সমর্থকদের দাবি, সাধারণ মানুষের সমর্থন এতটাই বেশি ছিল যে বন্ধ সর্বাত্মক ভাবে সফল হয়েছে।
কলেজ স্ট্রিট মোড়ে সকালে রাস্তা অবরোধ করেছিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই ইউনিট। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘এ বার অনেক কম প্রচেষ্টাতেই বন্ধ সফল হল। কারণ মানুষ সমর্থন করেছেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে।’’ যদিও দীর্ঘক্ষণ কলেজ স্ট্রিট বন্ধ থাকায় সেখান দিয়ে যাতায়াতকারীরা দুর্ভোগে পড়েন বলে অভিযোগ। কিছু বাস অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। কয়েকটি দোকানও জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হাজরা মোড়ে বেলা বারোটা নাগাদ সিপিএমের কর্মীরা মিনিট পনেরো রাস্তা অবরোধ করেন। কিছু ক্ষণ ফুটবলও খেলা হয়। রাস্তা অবরোধ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেটের সামনে ক্যারম খেলতে দেখা যায় এসএফআই সমর্থকদের।
আরও পড়ুন: যাত্রী কম, ঝামেলার আশঙ্কায় হাতে গোনা বাস পথে
মৌলালিতে অবশ্য কংগ্রেস কর্মীদের মিছিল ঘিরে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়। বিধান ভবনের সামনে থেকে মিছিল এন্টালিতে পৌঁছলে সেখানে জোর করে পেট্রল পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এর পরে মৌলালি মোড় অবরোধ করে বন্ধ সমর্থকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বৌবাজারে পুলিশের সামনেই রাস্তার মানুষজনকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বাম কর্মীদের বিরুদ্ধে। যশোর রোডের লেক টাউন, দমদম এয়ারপোর্টের এক নম্বর গেট, দু’নম্বর গেট ও নাগেরবাজারে অবরোধ করেন বাম কর্মীরা। এর জেরে সকালে যশোর রোডে যানজট হয়।
এ দিন হাওড়ায় অধিকাংশ দোকান, বাজার খোলা থাকলেও রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। বামফ্রন্টের তরফে পথ অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হলেও পুলিশ কোথাও জোর করে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়নি। অবরোধ করা হয় কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বেতড় মোড়, লক্ষ্মীনারায়ণতলা, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া ময়দান, পঞ্চাননতলা মোড়-সহ অন্যান্য জায়গায়। হাওড়া ময়দানে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ চলে। তবে হাওড়া পুরসভা-সহ সরকারি অফিসগুলিতে উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। বাস না পেয়ে বহু মানুষকে হেঁটে হাওড়া স্টেশনের দিকে যেতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: ট্রাক্টর নিয়ে ঢুকব প্রজাতন্ত্র দিবসের কুজকাওয়াজে, হুঙ্কার কৃষক নেতার
এ দিন সকাল থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বহু জায়গায় অবরোধের জেরে পরিষেবা ব্যাহত হয়। নাজেহাল হন বহু যাত্রী। বেলা ১২টার পরে অবশ্য অধিকাংশ জায়গায় অবরোধ উঠে যায়। হাওড়া স্টেশনে সকাল থেকে প্রি-পেড ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ছিল প্রায় ফাঁকা। দুপুরের পরে ট্যাক্সির সংখ্যা বাড়ে। প্রায় একই চিত্র ছিল শিয়ালদহ স্টেশনেও। ট্যাক্সি ও অটো ছিল খুব কম। যাদবপুর স্টেশনের কাছে বন্ধ সমর্থকেরা রেল অবরোধ করেন বলে অভিযোগ।
এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ মধ্যমগ্রাম স্টেশনে রেল অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকেরা। ঘণ্টাখানেক অবরোধ চলার পরে যাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বেধে যায়। কিছু পরে রেললাইন ছেড়ে মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় অবরোধ করা হয়। বেশ কিছু ক্ষণ পরে যাত্রীরা এসে অবরোধ তোলার অনুরোধ জানালে ফের বচসা বাধে। পরে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
বিধাননগর, রাজারহাটে এ দিন বেসরকারি বাস তুলনায় কম দেখা গেলেও সরকারি বাস চালু ছিল। তবে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। সকাল গড়িয়ে দুপুর হতেই কার্যত ছুটির মেজাজ দেখা যায় এলাকায়। তবে নিউ টাউন, পাঁচ নম্বর সেক্টরে পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক।