অবশেষে ভোল বদলাতে চলেছে শিয়ালদহ স্টেশনের।
১৫০ বছর ছুঁইছুঁই স্টেশনের গায়ে রূপটান লাগবে আগামী বছরের মধ্যেই। ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি উন্নত করা হবে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যও।
চলতি আর্থিক বছরের বাজেটেই রেলের বিভিন্ন অঞ্চলে (জোন) উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। এর জন্য অঞ্চলগুলিকে কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করার
অধিকারও দেওয়া হয়েছিল। ‘আমব্রেলা ওয়ার্ক’ প্রকল্পের আওতায় ওই উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্প্রতি কর্তাদের অনুমোদন পেয়েছে। শিয়ালদহ স্টেশন সাজিয়ে তুলতে স্থপতির পরামর্শ নেওয়া হয়েছে বলে রেল সূত্রের খবর।
কী রয়েছে নতুন পরিকল্পনায়?
স্টেশনে প্রবেশ এবং প্রস্থানের পথগুলিকে বিমানবন্দরের ধাঁচে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। যাতে যাত্রীরা সহজেই যাওয়া-আসা করতে পারেন। নির্দিষ্ট করা হবে পার্কিংয়ের জায়গাও। স্টেশন চত্বরে ট্যাক্সি, বাস-সহ বিভিন্ন পরিবহণকে কী ভাবে রেলের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তা নিয়ে ‘রাইট্স’ ইতিমধ্যেই সমীক্ষা করেছে। রাজ্যের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
স্টেশন চত্বরে যাত্রীদের চলাফেরার পরিসরও বাড়ানো হচ্ছে। পার্টিশন দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ঘরকে ভেঙে ওই পরিসর বার করা হবে। স্টেশনের মূল ভবন থেকে টিকিট কাউন্টার সরিয়ে আনা হবে বাইরে মাদার ডেয়ারির বুথের কাছে। দোতলা বুকিং অফিস তৈরি হবে সেখানে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর টিকিট কাউন্টার ও প্রবেশপথের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি হবে ওই কাউন্টার, যাতে যাত্রীরা সহজেই ট্রেন বদলাতে পারেন।
উচ্চতা বাড়বে প্ল্যাটফর্ম শেডের। বসবে ‘হাই ভলিয়ুম-লো স্পিড পাখা’। বিদ্যুতের পাশাপাশি শব্দদূষণও কমবে ওই পাখার ব্যবহারে। স্টেশনের মূল ভবনের দোতলায় যে সব প্রশাসনিক অফিস রয়েছে, সেগুলিকে তিনতলায় নিয়ে যাওয়া হবে। দোতলায় তৈরি হবে এগজিকিউটিভ লাউঞ্জ। তার জন্য বসানো হবে ক্যাপসুল লিফটও। আইআরসিটিসি-র সঙ্গে ইতিমধ্যেই এ নিয়ে রেলের চুক্তি হয়েছে।
স্টেশনের নিরাপত্তায় চালু হবে ‘ইন্টিগ্রেটেড সিকিওরিটি সিস্টেম’। প্ল্যাটফর্ম, সার্কুলেটিং এরিয়া, টিকিট কাউন্টার-সহ স্টেশন জুড়েই থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। মেল-এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলিতে বসানো হবে মালপত্রের স্ক্যানার।
১২ কোচের লোকাল ট্রেনকে জায়গা দেওয়ার জন্য দুই, তিন এবং চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য দমদমের দিকে অনেকটাই বাড়ানো হবে। এত দিন ১ থেকে ৪-এ পর্যন্ত কোনও প্ল্যাটফর্মেই নয় কোচের বেশি লম্বা ট্রেনের দাঁড়ানোর মতো জায়গা ছিল না। এখন প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হলে ১২ কোচের ট্রেন ঢুকতে পারবে। যার ফলে অনেক বেশি যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। দূরপাল্লার ট্রেনের জন্য ৯বি এবং ৯সি প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি ৯ডি নামে আর একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে।
যাত্রীদের সুবিধার্থে জ্বলজ্বলে এবং দৃশ্যমান আধুনিক সাইনেজ এবং ডিসপ্লে বোর্ড বসানো হবে স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “ঢেলে সাজানো হচ্ছে ওই স্টেশনকে। আগামী বছরের মধ্যেই বেশির ভাগ কাজ শেষ হবে। কাজ শেষ হলে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের অনেকটাই উন্নতি হবে।”