Presidency College

প্রেসিডেন্সির বিতর্কে রাজনীতির থেকে এগিয়ে রইল ধর্ম

প্রস্তাবের বিপক্ষে বলতে গিয়ে রাজ্যসভার সদস্য ও প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী জহর সরকার জানালেন, নির্বাচন হলে ভারতের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ যান ভোট দিতে। তেমন বিপুল সংখ্যক দেশবাসীকে ধর্মস্থানে যেতে দেখা যায় কি?

Advertisement

অনঘ গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

আগামী সোমবার, ২২ জানুয়ারি, উদ্বোধন হবে অযোধ্যার রামমন্দিরের। কেন্দ্রের শাসক শিবিরের তরফে দেশ জুড়ে পুরোদমে তার প্রচার চলছে। তার আগে ভারতীয়দের ভাবনায় রাজনীতি আর ধর্মের মধ্যে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়াদের এক বিতর্কে উঠে এল ভারতীয় মননের নানা দিক।

Advertisement

শুক্রবার সুধাংশু দাশগুপ্ত স্মারক বিতর্কের শুরুতেই প্রস্তাবের পক্ষে বলতে উঠে ব্রিটিশ শাসনের কথা বললেন প্রেসিডেন্সির বর্তমান পড়ুয়া সৃঞ্জয় দেবগুপ্ত। বোঝাতে চাইলেন, ভারতীয়দের ধর্মীয় ভাবনার উপরে ভিত্তি করে বৈধতা খুঁজেছে বিদেশি শাসকও। আবার একাধিক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনে তৈরি হয়েছে হিন্দুস্থানি ধ্রুপদী সঙ্গীতের মতো সম্পদ।

প্রস্তাবের বিপক্ষে বলতে গিয়ে রাজ্যসভার সদস্য ও প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী জহর সরকার জানালেন, নির্বাচন হলে ভারতের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ যান ভোট দিতে। তেমন বিপুল সংখ্যক দেশবাসীকে ধর্মস্থানে যেতে দেখা যায় কি? নাম না করেও অযোধ্যার কথা উল্লেখ করে তাঁর বক্তব্য, একাধিক বার ধ্বংসাত্মক কাজের চিহ্ন বহনকারী স্থানে তৈরি সৌধ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এ ভাবে দু’-একটি ভোটে জেতা যেতে পারে। কিন্তু দেশের অন্য সমস্যা সম্পূর্ণ চাপা পড়বে না।

Advertisement

ব্যক্তিগত ধর্মীয় ভাবনা এবং ধর্মের উপরে নির্ভরশীল চিন্তার পার্থক্যের কথা উল্লেখ করলেন প্রেসিডেন্সির তরুণ পড়ুয়া জ্যোতির্ময় দত্ত। তিনি জানালেন, এমন ভাবনা থেকেই তৈরি হয় সেই ধর্মের রক্ষক পরিচয় দেওয়া সরকারের উপরে নির্ভরতা। ফলে ঘটে যায় হিংসা।

কিন্তু ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তা সব সময়ে যে ধর্মের উপরে নির্ভরশীল নয়, তা বোঝাতে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর চম্পারণ সত্যাগ্রহের উদাহরণ টানলেন প্রাক্তনী সোমক রায়। মনে করিয়ে দিলেন, এই আন্দোলনের সময়ে গান্ধী ও তাঁর সমর্থকেরা প্রার্থনাসভা করেননি। ভজনওগাওয়া হয়নি। কিন্তু ভারতীয়দের রাজনৈতিক আন্দোলনের সামনে শক্তিশালী ব্রিটিশ শাসককে নতজানু হতে হয়েছিল।

পড়ুয়া সম্পূর্ণা সান্যালের আবার দাবি, ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মেরস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজে গরু এবং শুয়োরের চর্বি থাকার গুজবথেকেই শুরু হয় লড়াই। অর্থাৎ, অন্য কারণ থাকলেও শেষ পর্যন্তআগুন জ্বলে সেই ধর্মীয় কারণ থেকেই। একই ভাবে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির থেকে জঙ্গিদের সরানোরঅভিযানের পরবর্তী ঘটনাক্রমে ধর্মীয় রং লাগে।

প্রাক্তন বিচারপতি ও প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সুব্রত তালুকদারের অবশ্য দাবি, ভারত ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। ভারতের বহুত্ববাদী চরিত্রেররক্ষাকর্তা সংবিধান। তাই রাজনারায়ণ বনাম ইন্দিরা গান্ধীরমামলায় আদালত গরু ও বাছুরকে রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন হিন্দু কলেজ) পথ চলা যে হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষদের শিক্ষাদানের জন্য শুরু হয়েছিল, এ দিন তা মনে করিয়ে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়া ঋক ভট্টাচার্য। আর প্রাক্তনী তানিয়া ভরদ্বাজ বোঝালেন, বহু ধর্ম, সংস্কৃতির দেশ ভারতকে বেঁধে রেখেছে রাজনীতির আঠাই।

প্রেসিডেন্সির বিদগ্ধ আসরে ভোটাভুটিতে জিতল ভারতীয়দের মনে ধর্মের স্থানই। অন্য দিকে, চম্পারণ সত্যাগ্রহের সূত্র ধরে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও চিকিৎসক কুণাল সরকার আক্ষেপের সুরে জানালেন, নীল-কর সাহেবদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যাঁর ক্ষুরধার লেখনী বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল, সেই হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নামে এখন হরিশ মুখার্জি রোড। অথচ কোনও ফলক পর্যন্ত নেই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement