কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের পতাকা ও ফ্লেক্স ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ। কোথাও বা বিরোধী পক্ষের দফতরে ঢুকে কর্মী-সমর্থকদের মারধরের নালিশ। কোথাও আবার বিরোধী প্রার্থীর বাড়ির সামনে বোমাবাজি। পুরভোট ঘিরে শহর কলকাতা এবং উপকণ্ঠে উত্তেজনার পারদ ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী।
আলিপুর বা কাশীপুরের বড়সড় হাঙ্গামার পাশাপাশি মহানগরীর নানা প্রান্তে ছোটখাটো হামলা, খুচরো মারপিট এবং প্রতিবাদীদের অবরোধ সমানে চলেছে। বুধবার রাতে বাঘা যতীন এলাকায় দু’টি ওয়ার্ডে সংঘর্ষ বাধে। ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী রিঙ্কু নস্করের অভিযোগ, সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে চিত্তরঞ্জন কলোনি-সহ ১০১, ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায় তৃণমূলের লোকজন। ভাঙচুরের সঙ্গে সঙ্গে যথেচ্ছ গালিগালাজ করে। রাতের বড় হামলাটি হয় বাঘা যতীনে। সেখানে সিপিএমের একটি অফিসে ঢুকে কর্মী-সমর্থকদের প্রচণ্ড মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় ৫-৬ জন কর্মী-সমর্থক গুরুতর আহত হন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পার্টি অফিসে হামলার প্রতিবাদে রাত ১০টা নাগাদ বাঘা যতীন মোড় অবরোধ করেন সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে তৃণমূল। শাসক দলের তরফে দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। তেমন কিছুই ঘটেনি।’’
এ দিনই কংগ্রেসের দলীয় পতাকা এবং ফ্লেক্স ছেঁড়ার অভিযোগে উত্তেজনা ছড়ায় গরফার নন্দীবাগান এলাকায়। পুলিশি সূত্রের খবর, সকালে একটি রাজনৈতিক দলের ফ্লেক্স পোড়া অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রথমে বচসা বাধে, পরে হাতাহাতি বেধে যায়। দু’পক্ষই পরে পুলিশের কাছে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। কংগ্রেসের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শাখার সহ-সভাপতি নিখিলকৃষ্ণ গুহ অভিযোগ করেন, কলকাতা পুরসভার ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের নন্দীবাগানে শাসক দলের আশ্রিত কয়েক জন দুষ্কৃতী তাঁদের দলীয় ফ্লেক্স পুড়িয়ে দিয়েছে। দলের তরফে সেই বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হচ্ছিল। তখনই স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের নেতৃত্বে কিছু লোক তাঁদের উপরে চড়াও হয়। মারধর করা হয় কংগ্রেস প্রার্থী আশিসকুমার রায়কেও। আহত আশিসবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় বলে জানান নিখিলবাবু।
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তরুণ মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘কংগ্রেসের পতাকা পোড়ানো বা ছেঁড়ার কোনও ঘটনাতেই তৃণমূল জড়িত নয়। তৃণমূল কাউকে মারেওনি। বরং কংগ্রেসই আমাকে মেরেছে। কংগ্রেস এই ওয়ার্ডে তৃণমূলের অনেক পতাকা এবং ফ্লেক্স ছিঁড়েও দিয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, এ দিন একটি আংশিক পোড়া ফ্লেক্সকে ঘিরে গোলমাল শুরু করে কংগ্রেসের লোকজন। তারা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে। তিনি মারামারি থামাতে গেলে তাঁকেও পেটানো হয়।
শুধু সিপিএম বা কংগ্রেস নয়, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে মুখর বিজেপি-ও। মঙ্গলবার রাতে বেহালার ১১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী শর্মিলা সরকারের বাড়ির সামনে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। শর্মিলাদেবী বলেন, ‘‘তৃণমূলই আমার উপরে হামলা চালিয়েছে। আমার বাড়ি তাক করে বোমা ছুড়েছে। বুধবার সকালে প্রচারের সময়েও আমাকে হুমকি দেয় তৃণমূল। পুলিশকে জানিয়েছি।’’ তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য এই অভিযোগও অস্বীকার করা হয়েছে।