দু’পক্ষের গোলমাল থামাতে এলাকায় র্যাফ। মঙ্গলবার, শিবপুরে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
এক তরুণ-তরুণীর সম্পর্ক ঘিরে সোমবার রাতে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল হাওড়ার শিবপুর। অভিযোগ, পুলিশের সামনেই পাশাপাশি দু’টি পাড়ার বাসিন্দারা বাঁশ, লাঠি, রড, ইট নিয়ে একে অপরকে আক্রমণ করে। ভাঙচুর করা হয় একাধিক দোকান, এটিএম কাউন্টার। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় মোটরবাইকে। এই ঘটনার পরে, মঙ্গলবার সকালে এলাকার একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির ভিতর থেকে এক যুবকের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই যুবককে মারধর করে বহুতলের উপর থেকে ঠেলে ফেলে খুন করা হয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি, ওই যুবকের মৃত্যুর সঙ্গে সোমবার রাতের ঘটনার কোনও যোগ নেই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি স্থানীয় ডোমপাড়ার এক তরুণের সঙ্গে উত্তর হাওড়ার গোলাবাড়ির বাসিন্দা এক তরুণীর সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু কিছু দিন ধরেই ওই তরুণীর পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না। উল্টো দিকে, ওই যুবকের পাশের পাড়ার কিছু লোকজনও এই সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবাদ করছিলেন। পুলিশ জানায়, সোমবার বিকেলে শিবপুরের কাজিপাড়ার কাছে একটি পার্কে ওই তরুণ-তরুণী যখন গল্প করছিলেন, তখন যুবকের পাশের পাড়ার লোকজন সেখানে হাজির হন এবং গোলমাল শুরু হয়।
এ দিন বাগদি পাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণা রাউত জানান, ‘‘খবর পেয়ে দুই পরিবারের সদস্যেরাই পাড়ার লোকজন নিয়ে ওই পার্কে জড়ো হন। এর পরে বেশি রাতে দু’টি পরিবারের বিবাদ দুই পাড়ার মধ্যে সংঘর্ষে পরিণত হয়।’’
পুলিশ জানায়, রাত ১১টার সময় কাজিপাড়া এবং ডোমপাড়ার লোকজন পরস্পরের উপরে লাঠি, রড নিয়ে চড়াও হন। পুলিশের সামনেই শুরু হয় ইটবৃষ্টি। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ নামানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করে।
এর পরে মঙ্গলবার সকালে এলাকার একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের নিচ থেকে গুড্ডু চৌরাসিয়া নামে বছর একত্রিশের এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। ডোমপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতে গোলমালের সময় কাজিপাড়ার দুষ্কৃতীরাই খুন করেছে ওই যুবককে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় ফের উত্তেজনা ছড়ায়। উত্তেজিত বাসিন্দারা সকাল ১০টা থেকে জিটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা জি টি রোডের উপরে বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। রাস্তা দিয়ে হেঁটেও যাতায়াত করা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ নিয়ে হাজির হন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। পরে পুলিশ ওই যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের আশ্বাস দিলে প্রায় দু’ঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে।
বিজয়কুমার রাম নামে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘‘কাল রাতে দুই পাড়ার মধ্যে গোলমালের সময়ে কাজিপাড়ার কিছু দুষ্কৃতী গুড্ডুকে একা পেয়ে ওই নির্মীয়মাণ বহুতলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ঠেলে ফেলে দিয়েছে। গুড্ডু কাল রাতের গোলমালে ছিলেন না।’’
পুলিশ অবশ্য ওই যুবককে খুন করার অভিযোগ মানতে নারাজ। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই যুবক নির্মীয়মাণ বহুতলের উপর তলায় বসে বন্ধুদের সঙ্গে সোমবার রাতে মদ্যপান করছিলেন। তখনই লিফটের গর্ত দিয়ে কোনও ভাবে তিনি নীচে পড়ে যান। গুড্ডুকে তাঁর বন্ধুরা ঠেলে নীচে ফেলে দিয়েছেন, না কি তিনি নিজেই মত্ত অবস্থায় নীচে পড়ে গিয়েছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
সোমবার রাতে দুই পাড়ার গোলমালে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এ নিয়ে ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। কড়া হাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়। লাঠি নিয়ে তাড়া করে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’’