ভূলুণ্ঠিত: তিন তরুণ-তরুণীর মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভরত এসএফআই কর্মীদের সঙ্গে গোলমাল পুলিশের। মঙ্গলবার, সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে। ছবি: সুমন বল্লভ
ইছাপুরের ১৮ বছরের তরুণ শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর প্রতিবাদে স্বাস্থ্য ভবনে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশনের ডাক দিয়েছিল এসএফআই। মঙ্গলবার পাঁচ নম্বর সেক্টরে সেই কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার বাধে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিক্ষোভকারীদের। পুলিশ ১০ জনকে আটক করেছে। রাতে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিক্ষোভকারী ছাত্রছাত্রীরা জানান, শুভ্রজিৎ-সহ তিন তরুণ-তরুণীর মর্মান্তিক পরিণতি মেনে নেওয়া যায় না। তার প্রতিবাদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে স্বাস্থ্য দফতরের সামনে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশনের কর্মসূচি ছিল। তাঁদের অভিযোগ, মিছিল করে যাওয়ার সময়ে পুলিশ তাঁদের আটকায়। তাঁরা রাস্তায় বসে পড়েন। সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, রাজ্য সভাপতি প্রতীক উর রহমান-সহ ১০ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময়ে এসএফআই কর্মীরা প্রতিবাদ জানালে পুলিশ ছাত্রী-সহ সকলকেই মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ।
তাঁদের অভিযোগ, প্রসেনজিৎ দে নামে এসএফআইয়ের এক কর্মীকে থানা চত্বরে ফেলে লাথি মারে পুলিশ। প্রতিবাদ করলে তনুশ্রী মণ্ডল নামের এক ছাত্রীকে হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সংগঠনের কলকাতা জেলা কমিটির এক ছাত্রনেতার কথায়, ‘‘শুভ্রজিৎ-সহ তিন তরুণের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু এই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অরাজক ছবি তুলে ধরেছে। এ দিন স্বাস্থ্য দফতরে ডেপুটেশন দেওয়ার কথা ছিল। মিছিল করে যাওয়ার সময়ে পুলিশ ওই ঘটনা ঘটায়।’’
যদিও পুলিশ সূত্রের খবর, অনুমতি ছাড়া মিছিল হচ্ছিল। ৫০ জন সদস্য জড়ো হয়েছিলেন। বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা সাড়া দেননি। পুলিশ সূত্রের খবর, কাউকে মারধর করা হয়নি। উল্টে তাঁদের উপরেই বিক্ষোভকারীরা চড়াও হন বলে পুলিশের পাল্টা অভিযোগ।
প্রশ্ন উঠেছে, সল্টলেকে বিভিন্ন কন্টেনমেন্ট জ়োনে লকডাউন চলছে। এই অবস্থায় কেন এমন কর্মসূচি?
ছাত্রছাত্রীদের একাংশ জানান, পর পর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এই অবস্থায় দায়িত্বশীল ছাত্র সংগঠন হিসেবে এসএফআই চুপ করে বসে থাকতে পারে না। সামাজিক দূরত্ব মেনেই মিছিল হচ্ছিল। অথচ পুলিশ যে ভাবে আক্রমণ চালিয়েছে,
তাতে সরকারের চেহারা আরও এক বার স্পষ্ট হল।
এসএফআই জানিয়েছে, কাল বৃহস্পতিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ অভিযানে থাকবে বাম ছাত্র, যুব এবং মহিলা সংগঠন। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সৃজন বলেন, ‘‘এখন রোগীদের হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরতে হচ্ছে। ভোট এলে ম্যাডামকে ভোটারদের দরজায় ঘুরতে হবে। আজ রোগীরা যে ব্যবহার পাচ্ছেন, সে দিন উনিও সেই ব্যবহার পাবেন।’’ বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোথায় করোনা পরীক্ষা হবে, কারও করোনা হলে তিনি কোথায় যাবেন, সব অনিশ্চিত। সরকারের গাফিলতিতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু খুনের সমান। ছাত্রেরা সঙ্গত প্রতিবাদ করায় তাদের লাঠিপেটা করা হল।’’
একই সুরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের এই আক্রমণকে তীব্র ধিক্কার জানাই। নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকারের এই আক্রমণ।’’ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘চিকিৎসা পরিষেবায় কোনও গাফিলতি নেই।’’