ফাইল চিত্র।
কলকাতার বেশ কিছু সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বা সরকার পোষিত স্কুলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি শিক্ষক রয়েছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলার ৮৭ জন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে এই শহরেই। এই বদলিকে বলা হচ্ছে বিশেষ কারণে সাধারণ বদলি। শিক্ষক মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, বিভিন্ন জেলায় অনেক স্কুলে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা এমনিতেই কম, সেখানে এত জনকে বদলি করে কলকাতায় নিয়ে আসা হল কেন? বিশেষত শহরের বেশ কিছু স্কুলে যখন শিক্ষক বেশি রয়েছেন। এর ফলে পড়ুয়াদের স্বার্থ রক্ষা হল কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
সম্প্রতি ছ’হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের বদলির অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার। পোর্টালের মাধ্যমে মিউচুয়াল ট্রান্সফার বা আপস বদলির প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এই বদলি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষকদের বদলির প্রক্রিয়া দ্রুত হচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়া কখনওই ছাত্রদের স্বার্থ বিরোধী হবে না। দেখতে হবে, শিক্ষকদের বদলি হলেও স্কুলের পঠনপাঠন যেন ব্যাহত না হয়। উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর বা জঙ্গলমহল থেকে শুধু শিক্ষকেরা কলকাতায় আসতে চাইবেন তা হবে না। তা হলে ওই সব জেলার স্কুলে পড়াবেন কারা? বদলি প্রক্রিয়া হবে ছাত্রদের স্বার্থ মাথায় রেখেই।’’
শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, কলকাতায় অন্তত দুশোটি স্কুল আছে, যেখানে ছাত্রের সংখ্যা তলানিতে। অথচ সেখানে পর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষকদের মতে, ওই সব স্কুল থেকে বাড়তি শিক্ষকদের বদলি করে কলকাতার যে সমস্ত স্কুলে শিক্ষক দরকার, সেখানে নিয়োগ করলে ভাল হত। এর ফলে যে স্কুলে শিক্ষক কম, সেই স্কুল উপকৃত হত। আবার যে শিক্ষকেরা ছাত্রাভাবে পড়ানোর সুযোগ পাচ্ছিলেন না, তাঁরাও কাজ করতে পেরে মানসিক শান্তি পেতেন। শিক্ষক মহলের প্রশ্ন, শিক্ষামন্ত্রী ছাত্রদের স্বার্থ দেখার কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু আদৌ কি তা মেনে চলা হচ্ছে? মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কেন পরিকল্পিত ভাবে বিশেষ কারণে সাধারণ বদলি করছে না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
জেলা থেকে কলকাতার বিভিন্ন স্কুলে ৮৭ জন শিক্ষকের এই বদলি নিয়ে সরব হয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশও। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘বিদ্যালয়ের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিলেই শিক্ষার মান বাড়বে। বদলির বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া দরকার বলে মনে করি।’’ নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘অপরিকল্পিত ভাবে এই বিশেষ কারণে সাধারণ বদলির জেরে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষক কমে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের অনেক হাইস্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। এ দিকে, আমরা সমীক্ষা করে দেখেছি কলকাতায় বেশ কিছু স্কুলে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক বেশি।’’
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘বদলির নীতি নির্ধারণ করা বা বদলির সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা দফতর। মধ্য শিক্ষা পর্ষদ শুধু অনুমোদন দেয়। এই বদলিগুলির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে অনেক দিন ধরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদে এসে পড়েছিল। সেগুলি অনুমোদন করা হয়েছে।’’