আরহাম রহমত
উদ্ধার হল এক স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পাশে চারতলা এক আবাসনে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম আরহাম রহমত (১৭)।
পুলিশ জানায়, শনিবার দুপুর তিনটে নাগাদ আরহামের মা-বাবা ডাক্তারের কাছে যান। বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাঁরা বাড়ি ফিরে বেল টিপলেও আরহামের সাড়াশব্দ পাননি। এর পরে তাঁরা ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে মেয়েকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে ঝুলতে দেখেন। চিৎকারে ছুটে আসেন পড়শিরা। পুলিশ আরহামকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পার্ক সার্কাসের একটি স্কুলের ছাত্রী আরহাম মাধ্যমিকে ভালো ফল করায় তার দাদা একটি মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিলেন আরহামকে। মৃতার বাবা মহম্মদ রহমতুল্লা বলেন, ‘‘মাসখানেক আগে মোবাইল পাওয়ার পর থেকেই মেয়ে দিনরাত ফোনে বুঁদ হয়ে থাকত। পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছিল বলে মোবাইলটি ওর থেকে নিয়ে নিই।’’ স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন সাতেক ধরে মোবাইল নিয়ে মা-মেয়ের মধ্যে অশান্তি চলছিল। রহমতুল্লা বলেন, ‘‘৩ জুলাই মেয়ের জন্মদিন। আমাদের বলেছিল, মোবাইলে বন্ধুদের শুভেচ্ছা আসবে। অনেকে ফোন করবে। কিন্তু মোবাইলটি ওর কাছে থাকলে সব কিছু ভুলে তাতেই মেতে থাকত। তাই ওকে মোবাইল ফেরত দিইনি।’’
রহমতুল্লার তিন মেয়ে ও তিন ছেলে। তিন ছেলেই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। দুই মেয়ে বিবাহিতা। পার্ক সার্কাসের ফ্ল্যাটে ছোট মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন পেশায় ব্যবসায়ী রহমতুল্লা। রবিবার সকালে ওই আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন মা মাহজবিন আরা। তল্লাটের বাসিন্দারা আরহামের এমন পরিণতিতে শোকাহত।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন, ‘‘স্কুলের ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিলে তারা সেটা খেলনা ভেবে ব্যবহার করতে থাকে। মোবাইলের আসক্তিতে তারা সব কিছু ভুলে গিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে স্কুল পর্যায়ের পড়ুয়াদের হাতে মোবাইল না দেওয়াই উচিত।’’ মনোরোগের চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের ব্যাখ্যা, ‘‘মোবাইলের ভালো-খারাপ দু’টি দিকই রয়েছে। স্কুলের ছেলেমেয়েদের হাতে মোবাইল দেওয়ার আগে তাদের বোঝাতে হবে, ফোন যেন বিপদের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।’’