ফাইল চিত্র।
হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শহরের বহু বাড়ি এবং ভবন। অথচ সেগুলির ‘গ্রেডেশন’ এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি কলকাতা পুরসভা। ফলে ‘গ্রেড পেন্ডিং’-এ থাকা বাড়িগুলি নিয়ে কী হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি পুরসভার হেরিটেজ কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘গ্রেডেশন কী ভাবে দেওয়া যায়, তার একটা প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।’’ যদিও কবে সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের প্রায় ২৭৫টি বাড়ি এই মুহূর্তে ‘গ্রেড পেন্ডিং’-এর তালিকায় রয়েছে। ১২ বছর আগে, সেই ২০০৯ সালে পুরসভার তরফে যে হেরিটেজ তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, তখন থেকেই বাড়িগুলি এমন ভাবে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট তালিকার পরিমার্জন এখনও করা হয়নি। পুরসভার হেরিটেজ তালিকার নথি অন্তত তেমনই বলছে। এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে একাধিক ক্ষেত্রে আইনি জটিলতাও দেখা দিচ্ছে। অনেক বাড়ির মালিক আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন তাঁদের বাড়িকে হেরিটেজ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য। কারণ হেরিটেজ-মর্যাদা রয়েছে, এমন বাড়ি সংস্কার বা প্রয়োজনের ভিত্তিতে সারাই করতে হলেও মালিকদের পুরসভার দ্বারস্থ হতে হয়। পুরসভা অনুমতি দিলে তবেই সেগুলি সংস্কার বা সারাই করা যায়। কিন্তু পুরো বিষয়টি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় অনেক জায়গায় সমস্যা তৈরি হয়। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কাঠামোর নিরিখে বাড়ির অবস্থা ভাল নয়। তার দ্রুত মেরামতি প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে পুর হেরিটেজ কমিটির একটি বৈঠক ছিল। সেখানে এই গ্রেড পেন্ডিং-এর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। হেরিটেজ কমিটির সদস্যদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাড়িগুলির গ্রেডেশন দেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ, বাড়ি ও ভবনগুলিকে কোন গ্রেডেশন দেওয়া হবে, অর্থাৎ সেগুলি গ্রেডেশন ওয়ান, টু(এ), টু(বি) বা থ্রি-তে তালিকাভুক্ত করা হবে কি না, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বাইরের কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানই সরেজমিনে পরিদর্শন করে, সব দিক খতিয়ে দেখে হেরিটেজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সেখানে হেরিটেজ কমিটির কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। হেরিটেজ কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘বাইরের কোনও প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করতে হলে পুরসভাকে ওয়ার্ক অর্ডার দিতে হবে। সেখানে হেরিটেজ কমিটি তো কিছু করতে পারবে না। এ ব্যাপারে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
যদিও পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, আইন অনুযায়ী বাড়িগুলি হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেগুলির গ্রেডেশন দেওয়া হয়নি বলে এটা মনে করার কোনও কারণ নেই যে, সেগুলি হেরিটেজ তালিকাভুক্ত নয়। ফলে পরিস্থিতি বিচার করে অনেকে বলছেন, ‘গ্রেডেশন’-এর গোলকধাঁধাঁ থেকে এখনই ‘ঐতিহ্য’-এর নিষ্কৃতি নেই!