‘বিপজ্জনক বাজার’ ভেঙে মৃত্যু দু’জনের

পুরসভা সূত্রের খবর, দিন দশেক আগে বৈঠকখানা বাজারের দোতলা থেকে একতলার মুড়িপট্টিতে সিমেন্টের চাঙড় ভেঙে পড়ার পরেও সতর্ক হননি মুড়িপট্টির দোকানদারেরা। সেই মুড়িপট্টিরই দোতলার একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ে রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০২:২৯
Share:

ধ্বংসস্তূপ: এ ভাবেই ধসে পড়ে বৈঠকখানা বাজারের একাংশ। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ

ফের বিপজ্জনক কাঠামো ভেঙে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল শহরে। ফের কলকাতা পুরসভা জানাল, বাড়িতে বিপজ্জনক বোর্ড ছিলই! ফের মেয়র জানালেন, বিপজ্জনক বাড়ি খালি করতে দৃঢ় পদক্ষেপ করবে পুরসভা! কিন্তু আদতে তার কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে চূড়ান্ত সংশয় তৈরি হয়েছে পুর প্রশাসনের অভ্যন্তরেই। এ বারের ঘটনাস্থল বৈঠকখানা বাজার। রবিবার রাতে ওই বাজারের একাংশ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয় দু’জনের।

Advertisement

২০১৬ সালে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটে একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে যে প্রাণহানি হয়েছিল, পরপর তিন বছর তারই পুনরাবৃত্তি হল! যদিও এর মধ্যে বিপজ্জনক বা়ড়ি সংক্রান্ত আইন এনেছে কলকাতা পুর প্রশাসন, যাতে বিপজ্জনক বাড়ি খালি করা, ভাঙা নিয়ে পুরসভার হাতে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও বিপজ্জনক কাঠামো ভেঙে মৃত্যুর ঘটনায় দাঁড়ি পড়ল না!

পুরসভা সূত্রের খবর, দিন দশেক আগে বৈঠকখানা বাজারের দোতলা থেকে একতলার মুড়িপট্টিতে সিমেন্টের চাঙড় ভেঙে পড়ার পরেও সতর্ক হননি মুড়িপট্টির দোকানদারেরা। সেই মুড়িপট্টিরই দোতলার একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ে রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদ। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় মানিক জানা (৪৭) ও গোপাল নস্কর (৬৫) নামে দু’জনের মৃত্যু হয়। মানিক একটি আনাজের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। গোপালের মুড়ির দোকান রয়েছে। রাতেই গোপালকে উদ্ধার করে এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। সোমবার ভাঙা স্তূপ থেকে রতনের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রতন চৌধুরী, বিনোদ সাউ নামে আরও দুই আহতকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকখানা রোডের মুড়িপট্টির পাশেই রয়েছে আনাজপট্টি। সেখানকার দোকানদার শশাঙ্ক মাইতি বলেন, ‘‘হঠাৎ জোর আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি, মুড়িপট্টির দোতলার একাংশ ভেঙে পড়ছে। লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে চেঁচামেচির মধ্যেই লোকজন যে দিকে পারছে পালাচ্ছে। আমিও রাস্তার দিকে দৌড় লাগাই।’’ কিছুটা ধাতস্থ হয়ে শশাঙ্কেরা ঘটনাস্থলে ফিরে এসে দেখেন মুড়িপট্টির একাংশ ততক্ষণে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

বৈঠকখানা বাজারের সেক্রেটারি গোপালচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘পুরসভা বিপজ্জনক নোটিস দেওয়ার পরে পরে অনেকে দোতলায় শোওয়া বন্ধ না করলে আরও প্রাণহানি হতে পারত।’’ সোমবার সকালে দেখা গেল, ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই শেষ সম্বলের খোঁজে দোকানদারেরা হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ খুঁজে চলেছেন ক্যাশবাক্স, কেউ খুঁজছেন জরুরি নথি। বরো চেয়ারম্যান অপরাজিতা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সংস্কারের কথায় মালিকপক্ষ সাড়া দেননি।’’ পুরসভার নথি বলছে, ভেঙে পড়া বিপজ্জনক কাঠামোটি একটি বেসরকারি সংস্থার। বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাড়ি ভেঙে দু’জনের প্রাণহানি হয়েছিল। গত বছর জুলাইয়ে ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে আরও দু’জনের প্রাণহানি হয়। সে বছরই শিবতলা স্ট্রিটে আরও একটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে তিন জনের মৃত্যু হয়।

পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার জন্য সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছিল পুরসভা। কিন্তু সে অভিযান সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে পুরসভা। পুরসভার বক্তব্য, কলকাতা হাইকোর্ট বেআইনি বাড়ি ভাঙায় বেশি জোর দিচ্ছে। তাই আদালত অবমাননা যাতে না হয়, তাই পুরসভার ‘ডেমোলিশন গ্যাং’-কে বেআইনি বাড়ি ভাঙতেই পাঠানো হচ্ছে। এ দিকে বর্ষায় প্রাণহানির আশঙ্কা বাড়ছে বিপজ্জনক বাড়িতে! যদিও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বিপজ্জনক বাড়িতে না থাকার জন্য বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু তাও সেখানে থাকছেন বাসিন্দারা। পুরসভা এ বার দৃঢ় পদক্ষেপ করবে।’’

তবে তাতে প্রাণহানি থামবে কি না, তার কোনও উত্তর নেই পুর প্রশাসনের কাছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement