এসএসকেএম হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
এ বার একই গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপন হল দু’টি অঙ্গ। শুক্রবার মরণোত্তর অঙ্গদানে এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা। এ দিন ভোর থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত এসএসকেএমে চলেছে অস্ত্রোপচার। যাতে একটি কিডনি ও যকৃৎ পেয়েছেন চৌত্রিশ বছরের এক যুবক।
‘ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন’ (নোটো)-এর তথ্য বলছে, একই মানুষের শরীরে দু’টি অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে, এমন সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ২১। সেই তালিকায় যুক্ত হল এসএসকেএমের এই প্রতিস্থাপন। এর আগে আর এন টেগোর হাসপাতালে একই সঙ্গে কিডনি ও যকৃৎ প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটলেও, সে ক্ষেত্রে অঙ্গদাতা ছিলেন জীবন্ত। নোটো-র আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, মরণোত্তর অঙ্গদানে এক জন গ্রহীতার শরীরে একই সঙ্গে কিডনি এবং যকৃৎ প্রতিস্থাপনের ঘটনা পূর্ব ভারতে প্রথম বার হচ্ছে।
উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা জগদীশ মণ্ডল একটি দোকানে কাজ করতেন। গত ২১ অগস্ট দুপুরে রাস্তা পারাপারের সময়ে দ্রুত গতিতে আসা বাইকের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন তিনি। বাইকের চাকা বছর আটচল্লিশের ওই ব্যক্তির মাথার উপরে উঠে যায়। গুরুতর আহত জগদীশকে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করা হয়। কিন্তু, ক্রমশ অবস্থার অবনতি হচ্ছিল তাঁর। বুধবার রাতে চিকিৎসকেরা বোঝেন, জগদীশের ব্রেন ডেথ হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ব্রেন ডেথ ঘোষণা হয়। এর পরে তাঁর পরিজনেরা মরণোত্তর অঙ্গদানে সম্মতি দেন।
জগদীশের একটি কিডনি ও যকৃৎ পেলেন আদতে বিহারের বাসিন্দা, ৩৪ বছরের যুবক অমিত কুমার। অমিতের পরিজনেরা জানাচ্ছেন, ছোট থেকেই তাঁর কিডনির সমস্যা রয়েছে। ২০০৮ সালে চিকিৎসা করাতে আসেন কলকাতায়। তখন থেকেই দাদার সঙ্গে দক্ষিণ কলকাতার ভাড়া বাড়িতে রয়েছেন। কলকাতায় শুরু হয় ডায়ালিসিস। তাঁর বাবার একটি কিডনি অমিতের শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য তাঁরা পিজিআই-চণ্ডীগড়ে যান। সেখানে ধরা পড়ে, ওই যুবক হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত।
কলকাতায় ফিরে কিডনির পাশাপাশি হেপাটাইটিসেরও চিকিৎসা শুরু হয় অমিতের। কয়েক বছর পরে সেটি সারলেও, পেটে জল জমতে থাকে তাঁর। ২০২১ সালে এসএসকেএমে হেপাটোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীকে দেখান। পরীক্ষায় জানা যায়, সিরোসিস অব লিভারে আক্রান্ত অমিত।
অভিজিৎ বলেন, ‘‘লিভার খারাপ থাকলে শুধু কিডনি প্রতিস্থাপনে লাভ হবে না। তাই ওই যুবককে দু’টি অঙ্গই প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিই।’’ অমিত রাজি হওয়ায় শুক্রবার ভোরে শুরু হয় প্রতিস্থাপন। ২২ জন চিকিৎসকের দল প্রথমে যকৃৎ ও পরে কিডনি প্রতিস্থাপন করে।
অন্য দিকে, জগদীশের আরও একটি কিডনি পেয়েছেন এসএসকেএমের ৩২ বছরের যুবক এবং হৃৎপিণ্ড পেয়েছেন মেডিকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বছর চল্লিশের এক রোগী।