‘দেখলাম রসগোল্লার টুকরোয় লেগে রক্ত’

শান্তিনগরের রাস্তা ধরতে যাব, হঠাৎ হইহই আওয়াজ। ঘাড় ঘোরাতেই দেখলাম, বেলেঘাটা কানেক্টরের দিক থেকে এসে নিকো পার্কমুখী একটি বাস দু’টি ছেলেকে পিষে দিয়ে চলে গিয়েছে।

Advertisement

সোনালি বর (প্রত্যক্ষদর্শী)

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৩
Share:

ঘটনাস্থলে চাপ চাপ রক্তের মধ্যেই পড়ে আছে রসগোল্লার ভাঙা হাঁড়ি। নিজস্ব চিত্র

ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো আগেও দেখেছি। কিন্তু আজ চোখের সামনে যা দেখলাম, বাকি জীবন সেই দৃশ্য আমাকে তাড়া করে বেড়াবে!

Advertisement

শনিবার বেলা ১১টা নাগাদ বেলেঘাটায় পুজো দিতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে সাড়ে ১১টা নাগাদ ট্র্যাফিক গার্ডের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সার্জেন্ট এক বাইকআরোহীর সঙ্গে চালান কাটা নিয়ে কথা বলছিলেন। উল্টো দিকে আইল্যান্ডের কাছে ছিলেন তিন জন পুলিশকর্মী এবং তিন জন মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার। শান্তিনগরের রাস্তা ধরতে যাব, হঠাৎ হইহই আওয়াজ। ঘাড় ঘোরাতেই দেখলাম, বেলেঘাটা কানেক্টরের দিক থেকে এসে নিকো পার্কমুখী একটি বাস দু’টি ছেলেকে পিষে দিয়ে চলে গিয়েছে। ওরা সাইকেলে চেপে মোড় পার হচ্ছিল। ছেলে দুটো প্রথমে রাস্তার উপরে পড়ে যায়। তার পরে বাসটাই ওদের উপর দিয়ে চলে যায়।

সকলের সঙ্গে আমিও ছুটে যাই। তখনও কি আর জানি, ওই দু’জন আমারই পাড়ার বহু দিনের চেনা বিশ্বজিৎ (ভুঁইয়া) ও সঞ্জয় (বনু)! আজ যখন ওদের থেঁতলে যাওয়া চেহারাটা প্রথম দেখলাম, বুকটা কেঁপে উঠেছিল। তখনও কিন্তু আমি ওদের চিনতে পারিনি। দেখলাম, এক জনের মুখের একপাশে রক্তের সঙ্গে লেগে রয়েছে রসগোল্লার টুকরো। চোখের মণি বেরিয়ে রাস্তায় চলে এসেছে। মুখের একটি হাড়ও অবশিষ্ট নেই। আর এক জনের শরীরের নাড়িভুঁড়ি দেখা যাচ্ছে। ওই দৃশ্য দেখার পরে খুব শরীর খারাপ লাগছিল। থরথর করে কাঁপছি তখন। চোখটা বুজে ফেললাম। মাথাটা ঘুরছে।

Advertisement

আমাদের পাড়ার এক দিদি মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিল। ওরও দেখলাম একই অবস্থা। পাড়ায় ফিরে যখন সকলকে দুর্ঘটনার কথাটা বললাম, তখনও জানি না, যে দু’জন মারা গিয়েছে, তাদের এক জন সুশীলদার (বিশ্বজিতের বাবা) ছেলে। শুনেই এক মহিলা জ্ঞান হারালেন। বিয়েবাড়ির জন্য দুই বন্ধু রসগোল্লা কিনতে গিয়েছিল। রোজ দু’বেলা ওদের দেখছি। অথচ, দুর্ঘটনাস্থলে ওদের দেহ দেখেও চিনতে পারলাম না! ধাক্কা মারার পরেও তো চালক বাসটা থামাতে পারতেন। তা হলে হয়তো ছেলে দুটো এ ভাবে মরত না।

ঘটনার পরে অশান্তি যখন শুরু হল, তখন আমি ফিরে এসেছি। তার পরে কী হল, তা নিয়ে পুলিশ পুলিশের কথা বলবে। পাড়ার লোকেদেরও বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয়, ওই জায়গার ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ঠিক করা দরকার। শান্তিনগর, সুকান্তনগর মিলিয়ে এতগুলো মানুষের বাস। বাইপাসের মতো ব্যস্ত রাস্তায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হবে কেন? আজও তো রাস্তা পেরোতে যাব, হঠাৎ গাড়ি ছেড়ে দিল। থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। এই অঞ্চলের মানুষের এটাই রোজের অভিজ্ঞতা। এত দিনেও একটা সাবওয়ে তৈরি হল না।

আজকের ঘটনায় শুনলাম, ওই বাসটা সিগন্যাল মানেনি। যার জন্য তরতাজা দুটো ছেলে চোখের সামনে মরে গেল। এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে। না হলে এমন ঘটনা এর পরেও ঘটতেই থাকবে। অকালে প্রাণ যাবে আরও অনেক বিশ্বজিৎ ও সঞ্জয়ের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement