‘সন্দেহজনক’ লেনদেনের অভিযোগে বুধবার দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
গত কয়েক মাসে ধরে এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে আচমকা বহু কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছিল। শেষে ১০৩ কোটি টাকার লেনদেন নজরে আসতেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। তদন্ত করতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, যে অ্যাকাউন্টে ওই লেনদেন হয়েছে, সেটি একটি সংস্থার। পরে খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, ওই সংস্থাটির অস্তিত্বই নেই! তখনই সন্দেহভাজন লেনদেন নিয়ে লালবাজারের দ্বারস্থ হন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ জানিয়েছে, ১০০ কোটি টাকারও বেশি ‘সন্দেহজনক’ লেনদেনের অভিযোগে বুধবার দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম মনোজকুমার বেহেরা এবং মহম্মদ কুইস আহমেদ। বছর পঁয়ত্রিশের মনোজকে ওড়িশার সম্বলপুর থেকে এবং চল্লিশ বছরের কুইসকে গার্ডেনরিচ থেকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাঁদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’জনকেই ৫ জুন পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এ দিন আদালতে মনোজ এবং কুইসের আইনজীবী তাঁদের জামিনের আর্জি না জানিয়ে কম দিনের জন্য পুলিশি হেফাজত দেওয়ার আবেদন করেন। সরকারি কৌঁসুলি তার বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘ওই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে প্রচুর টাকা লেনদেন হয়েছে। যে সংস্থার নামে এই লেনদেন হয়েছে, তার কোনও অস্তিত্বই নেই। তাই ধৃতদের ভাল করে জেরা করতে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হোক।’’
লালবাজার সূত্রের খবর, গত ১৭ মে ব্যাঙ্কের তরফে হেয়ার স্ট্রিট থানায় ওই অভিযোগ দায়ের করা হয়। যার তদন্ত শুরু করে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাঙ্ক প্রতারণা দমন শাখা। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে গত জুলাই থেকে প্রায় ১০৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে বিদেশে লেনদেনের প্রমাণও মিলেছে। তদন্তকারীর জানান, যে সংস্থার নামে ওই অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, সেটির ঠিকানা ছিল সল্টলেক সেক্টর ফাইভ। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই সংস্থার অস্তিত্বই নেই। সেখানে লেনদেনের সূত্র ধরে পুলিশ বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার হদিস পায়। ধৃত দু’জন লেনদেনে যুক্ত ভুয়ো সংস্থার অধিকর্তা বলে দাবি পুলিশের। এক তদন্তকারী জানান, কোথা থেকে টাকা এসেছে এবং সেই টাকা কোথায় কোথায় গিয়েছে, তা জানা প্রয়োজন। সে জন্যই ওই দুই অধিকর্তাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে বিপুল অর্থের লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন পুলিশকে। যার ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে শিবপুরের এক ব্যবসায়ীর আবাসনে রাখা গাড়ির ভিতর থেকে দু’কোটি কুড়ি লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং সোনা, রুপো ও হিরের গয়না প্রথমে উদ্ধার হয়েছিল। পরে আবাসনে আরও তল্লাশি চালিয়ে ব্যাঙ্ক প্রতারণা দমন শাখা নগদ ছ’কোটি টাকা উদ্ধার করে।