প্রতীকী ছবি।
প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত নয় পশ্চিম মেদিনীপুরের মুর্মু পরিবার। কিন্তু চিকিৎসকদের থেকে তাঁরা বুঝেছিলেন মরণোত্তর অঙ্গদানের গুরুত্ব। তাই স্ত্রীর ব্রেন ডেথের পরে অঙ্গদান করতে পিছপা হননি স্বামী। সেই সূত্রেই সোমবার শহরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নজির গড়ল ওই জনজাতি পরিবার।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা, বছর চল্লিশের আহ্লাদি মুর্মুর একটি কিডনি পেয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালের এক রোগী। আর একটি কিডনি পেয়েছেন বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক জন। আর লিভারও প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বাইপাসেরই আর একটি বেসরকারি হাসপাতালের রোগীর দেহে। এসএসকেএম হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রফেসর চিকিৎসক তথা ‘রোটো’ (রিজিওনাল অর্গ্যান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন)-র যুগ্ম অধিকর্তা অর্পিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘জনজাতি সম্প্রদায়ের এক জন মানুষ, যিনি প্রথাগত শিক্ষা পাননি। কিন্তু এই অঙ্গদানে সম্মতি দেওয়া তাঁদের বড় হৃদয়ের পরিচয়।’’
মাথায় চোট পেয়ে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি হয়েছিলেন আহ্লাদি। সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতেই চিকিৎসকেরা বুঝতে পারেন, ওই মহিলার ব্রেন ডেথ হয়েছে। সেই সময়ে অঙ্গদানের গুরুত্ব বোঝানো হয় হাসপাতালে উপস্থিত আহ্লাদির এক পরিজনকে। এর পরে বাড়ি থেকে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের ডেকে পাঠান চিকিৎসকেরা। তাঁরা আসতে শনিবার দুপুর হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানান, পরিবারের আর এক সদস্য আসার পরে তিনিও অঙ্গদানের গুরুত্ব বুঝে রাজি হয়ে যান। এর পরে আহ্লাদির পরিবারের দু’জনের উপস্থিতিতে অঙ্গদানের সম্মতি নেন চিকিৎসকেরা। তার পরেই শুরু হয় গ্রহীতার খোঁজ।
আহ্লাদির স্বামী হাঁদুলাল মুর্মূ বলেন, ‘‘স্ত্রীকে তো বাঁচাতে পারলাম না। কিন্তু ওঁর অঙ্গ পেয়ে অন্য কেউ সুস্থ হয়ে উঠবেন, সেটা চিকিৎসকেরা বুঝিয়ে ছিলেন। তাই আপত্তি করিনি।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, রবিবার সকালের মধ্যেই দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপন হয়ে যায়। বিকেলের মধ্যে হয় লিভার প্রতিস্থাপন। তিন জন গ্রহীতাই সুস্থ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।