নতুন: চক্রাকার রুটে পরিষেবা দেবে এই বাসগুলি। নিজস্ব চিত্র
শহরে চক্ররেলের ধাঁচে শুরু হতে চলেছে চক্রাকার রুটের বাস পরিষেবা। সরকারি বাসের এই রুটের মূল উদ্দেশ্য, রেল এবং মেট্রো রেলের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে পরিপূরক হিসেবে যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করা।
শহরতলির ট্রেন, মেট্রো এবং দূরপাল্লার বাস টার্মিনাসের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ মসৃণ করতে রেলের সংস্থা রাইট্স-এর পরামর্শ মেনে শহরের বাণিজ্য কেন্দ্রে চক্রাকার রুটের প্রথম বাস পরিষেবা শুরু হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ রেল এবং মেট্রো স্টেশন থেকে যাত্রীরা যাতে দ্রুত শহরের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বছর দুই আগে পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু করে পরিবহণ দফতর। সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় রাইট্স-কে। কলকাতা ও শহরতলির গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন, মেট্রো স্টেশন ও বাস টার্মিনাসে সম্ভাব্য যাত্রীর সংখ্যা হিসেব করে পরিকল্পনা তৈরি করে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা।
কী ভাবে চলবে এই বাস? পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, হাওড়া ময়দানকে চক্রাকার রুটের কেন্দ্র ধরা হয়েছে। সকালের দিকে প্রতি ১০ মিনিট অন্তর, পরের দিকে তা ১৫ মিনিট অন্তর ছাড়বে। হাওড়া ময়দান থেকে একসঙ্গে দু’টি করে বাস ছেড়ে তা হাওড়া সেতু পর্যন্ত যাবে। গঙ্গা পেরিয়ে শিয়ালদহের দিকে আসার সময়ে একটি ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং অন্যটি, বিপরীত দিকে চলবে। বাঁ দিকে যাওয়া বাস মহাত্মা গাঁধী রোড ধরে শিয়ালদহ ছুঁয়ে এ জে সি বসু রোড ধরে মল্লিক বাজার, এক্সাইড হয়ে ময়দান, পার্ক স্ট্রিট এসপ্লানেড ঘুরে ফের হাওড়া ময়দানে পৌঁছবে। রবীন্দ্র সেতু থেকে ডান দিকে ঘুরে যাওয়া বাসটি স্ট্র্যান্ড রোড, বি বা দী বাগ, এসপ্লানেড হয়ে চৌরঙ্গি রোড ধরে আবার এক্সাইড থেকে এ জে সি বসু রোড ধরে শিয়ালদহ অভিমুখে যাবে। সেখান থেকে বৌবাজার হয়ে হাওড়া ময়দানে পৌঁছবে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, সল্টলেক সেক্টর ফাইভ এবং উল্টোডাঙার মধ্যে চক্রাকার রুটের বাস পরিষেবা চালু থাকলেও সেটি রাইট্স-এর সুসংহত পরিকল্পনার অংশ নয়। নতুন এই রুট হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশন ছাড়াও ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো, উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো এবং এসপ্লানেড বাস স্ট্যান্ড ছুঁয়ে যাবে।
চক্রাকার বাস পরিষেবার এই রুটটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হচ্ছে। দফতর সূত্রের খবর, ধীরে ধীরে চক্রাকার রুটের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। আপাতত সারাদিনে ১৬টি বাস হাওড়া ময়দান রুটে পাক খাবে। তবে সব ক’টি বাসই নন এসি। রাজ্য পরিবহণ নিগমের স্থির করে দেওয়া ভাড়া এ ক্ষেত্রে কার্যকর থাকবে। দফতরের কর্তারা জানান, হাওড়া ও শিয়ালদহের মধ্যে ২৫ বছর ধরে চালু থাকা পুরনো একটি রুটের পুনর্বিন্যাস করে এটি চালু হয়েছে। যার অন্যতম উদ্দেশ্য, পরিবহণের মাধ্যমগুলিকে একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী না করে পরিপূরক হিসেবে তৈরি করা। তা হলে কোনও মাধ্যমেরই পঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। যাত্রীরাও শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তাঁদের সুবিধা মতো দ্রুত যাতায়াত করতে পারেন।
পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের ভাবনা ছিল চক্ররেল। তাঁর জন্মদিন ১ জুলাই। তা ছাড়া ১৯৪৮ সালের জুলাইয়ে তাঁরই হাত ধরে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম পথ চলা শুরু করেছিল। এ সব কথা মাথায় রেখেই চলতি মাস থেকে এই পরিষেবা শুরুর দিন ধার্য হয়েছে।”