অটোচালকদের কর্মশালায়। রবিবার, জোড়াবাগানে। — নিজস্ব চিত্র
জোড়াবাগান থানার উদ্যোগে অটোচালকদের নিয়ে কর্মশালা চলছিল। তাতে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টেরা অটো চালকদের ‘যাত্রীদের সম্মান ও ভালবাসার’ পরামর্শ দিচ্ছিলেন। জোড়াবাগান ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি অলোক সান্যালের বক্তব্য ছিল, ১৮-১৯ বছরের যুবকেরা লাইসেন্স পেয়েই বেপরোয়া ভাবে অটো চালাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ায় তাঁরা অটো ইউনিয়ন এবং মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
যাঁদের ভরসায় পুলিশ কর্তারা অটোচালকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইছেন, সেই অটো ইউনিয়নের নেতাদের বিরুদ্ধেই তোলাবাজির অভিযোগ তুলে সে সময়ে কলকাতার অন্য প্রান্তে চার ঘণ্টা অটো বন্ধ রাখলেন চালকেরা। যার জেরে চূড়ান্ত দুর্ভোগ পোহাতে হল যাত্রীদের। কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তারা মনে করছেন, রবিবার বলে তা-ও বাঁচোয়া। অন্য দিন হলে দুর্ভোগ সামলানো কার্যত অসম্ভব হয়ে যেত। যদিও চালকদের তোলা সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন গড়িয়া-গোলপার্ক অটো ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে ইউনিয়নের নেতারাই তোলাবাজিতে অভিযুক্ত, তাঁরা কতটা চালকদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, অটো ইউনিয়নের নেতাদের তোলাবাজির প্রতিবাদে রবিবার সকাল ৯টা থেকে গোলপার্ক-গড়িয়া এবং গোলপার্ক-পাটুলি রুটের সব অটো চলাচল বন্ধ রাখেন চালকেরা। দুপুর ১টা থেকে অটো চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়।
কী কারণে অটো বন্ধ রেখেছিলেন চালকেরা? অভিযোগ, ইউনিয়নের তরফে বেশি চাঁদা নেওয়ার প্রতিবাদে তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। ওই অটো ইউনিয়নের রুট সেক্রেটারি টুটু দাস জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী মাসিক ২ টাকা করে চাঁদা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশ না মেনে ২০১১ সাল থেকে দৈনিক ৩ টাকা করে চাঁদা তুলছেন গড়িয়া-গোলপার্ক অটো ড্রাইভার্স অ্যান্ড অপারেটর্স-এর সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ ঘোষ। মাস তিনেক আগে তিনি ইউনিয়নের মিটিংয়ে জোর করে সিদ্ধান্ত নেন, দৈনিক ৫ টাকা করে চাঁদা তোলা হবে।
টুটুবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের বলা হয়েছিল, ইউনিয়নের অফিস হবে। কম্পিউটার, এসি, বাথরুমের ব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন সুবিধারও ব্যবস্থা হবে। কিছুই হয়নি। সংগৃহীত অর্থের হিসেবও দেখানো হয়নি। তার প্রতিবাদে এ দিন অটো বন্ধ রাখা হয়।’’ অটোচালকেরা আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজ, সোমবার থেকে তাঁরা চাঁদা দেবেন না। বর্তমান অটো ইউনিয়নও ভেঙে দেওয়া হবে।
যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই দেবরাজ ঘোষ অবশ্য সব কিছু ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কাটা রুটে অটো চালানোর জন্য কয়েক জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। আমাকে হেনস্থা করতে এটা তাঁদেরই ষ়ড়যন্ত্র।’’ তাঁর দাবি, চাঁদা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়েছিল। সমস্ত টাকা বাঘা যতীনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় জমা রয়েছে। সব হিসেব অ়়ডিটরকে দিয়ে সময় মতো জানিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দেবরাজবাবু জানান, অটোচালকদের মাধ্যমে কখনওই এত টাকা ওঠে না যে, দাবি মতো তাঁদের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব।
অটো চালকেরা যখন ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সরব, ঠিক তখনই জোড়াবাগানে সমাজের নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টেরা অটোচালকদের হাতে যাত্রী হেনস্থার কথা তুললেন। কর্মশালায় উপস্থিত সমাজতাত্ত্বিক ইন্দ্রজ্যোতি সেনগুপ্তর কথায়, ‘‘যাত্রীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করলে চালকদের সমস্যায় পড়তে হবে না।’’ কর্মশালার প্রশিক্ষক, কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক ট্রেনিং স্কুলের সার্জেন্ট রাজেশ ভাণ্ডারী ট্রাফিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেন। প্রায় আধ ঘণ্টা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে চালকদের নিয়মকানুন শেখানো হয়। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক-৬) শিশিরকুমার দাম বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে কলকাতা পুলিশের তরফে চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। এই ধরনের কর্মশালার মাধ্যমে দুর্ঘটনা, যাত্রী হেনস্থার ঘটনা আগের তুলনায় অনেক কমেছে।’’