আনিস খান-কাণ্ডের প্রতিবাদে শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ-মিছিল। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
আমতার বাসিন্দা, ছাত্রনেতা আনিস খানকে ‘খুনের ঘটনার’ বিচার চেয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়াদের মিছিলে অবরুদ্ধ হয়ে গেল কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশ। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ পার্ক সার্কাসের সাত মাথার মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। প্রথমে মহাকরণ অভিযানের কথা থাকলেও বিকেল চারটে নাগাদ কলেজ স্ট্রিটে মিছিল শেষ হয়। কিন্তু মাঝের কয়েক ঘণ্টায় মিছিল পথ বদলানোয় বিভিন্ন মোড়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। আনিসের মৃত্যুর বিচার চেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি, ভাষা দিবসেও একই ভাবে শহরের রাজপথে দফায় দফায় বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা।
এ দিন বেলা বারোটা থেকেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়াদের জমায়েত বাড়ছিল। দুপুর দেড়টা নাগাদ মিছিলে বেশ ভিড় লক্ষ করা যায়। মিছিলের শুরুতেই পার্ক সার্কাসের আশপাশের রাস্তায় যানজট বাড়তে থাকে। সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ, পার্ক সার্কাস কানেক্টর, নিউ পার্ক স্ট্রিট ও শেক্সপিয়র সরণিতে তীব্র যানজট দেখা যায়। মিছিল শুরু হতেই এক্সাইড মোড় থেকে মল্লিকবাজার হয়ে শিয়ালদহগামী যানবাহনকে জওহরলাল নেহরু রোড, ধর্মতলা দিয়ে ঘুরিয়ে শিয়ালদহে পাঠানো হয়। মিছিলের জেরে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ায় চরম নাকাল হতে হয় সাধারণ মানুষকে।
মিছিল রুখতে এস এন ব্যানার্জি রোডের তিন জায়গায় ব্যারিকেড করেছিল পুলিশ। ফলে শিয়ালদহ থেকে এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে যাওয়ার গাড়িগুলি মহাত্মা গান্ধী রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এস এন ব্যানার্জি রোড দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ থাকার ফলে ধর্মতলা, হাওড়াগামী যানবাহনের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
পুলিশের কাছে আগাম খবর ছিল, মিছিল পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় থেকে মল্লিকবাজার হয়ে এ জে সি বসু রোড ধরে মৌলালির বাঁ দিকে এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে যাবে। কিন্তু মৌলালি মোড় থেকে এস এন ব্যানার্জি রোডের দিকে না গিয়ে মিছিলকারীরা সোজা শিয়ালদহের দিকে যেতে শুরু করেন। সেই সময়ে মিছিলকারীদের পথ পরিবর্তনে হতভম্ব হয়ে পড়ে পুলিশও। পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিলের গতিপথ বদলানোর জন্য মৌলালি মোড়ে পুলিশ ও মিছিলকারীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক সময়ে মিছিলকারীরা শিয়ালদহ উড়ালপুলের উপরে বসে পড়েন। শিয়ালদহ উড়ালপুলের উপরে যানজটের কবলে পড়ে সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে।
এ দিন মিছিলের জেরে প্রায় চার ঘণ্টা উত্তর ও মধ্য কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা প্রবল যানজটের কবলে পড়ে। সেই সঙ্গে পার্ক সার্কাস কানেক্টর, এ জে সি বসু রোড, এ পি সি রোড, সি আই টি রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, লেনিন সরণি, ক্রিক রো, কলেজ স্ট্রিট, নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট-সহ একাধিক রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। থমকে গিয়েছিল মহাত্মা গান্ধী রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউও। যানজটের কবলে পড়ে অনেকেই বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন।
বিকেল চারটে নাগাদ কলেজ স্ট্রিট মোড়ে মিছিল পৌঁছলেও সেখানে পুলিশের ব্যারিকেডে মিছিল আটকে পড়ে। আন্দোলনকারীরা রাস্তায় বসে পড়েন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশের হস্তক্ষেপে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মিছিল। বিক্ষোভকারীদের তুলে নেওয়া হয় প্রিজ়ন ভ্যানে।