কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
দৃশ্যদূষণ ও দুর্ঘটনা ঠেকাতে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেব্ল সংযোগের তার সরানোর কাজে এ বার থেকে মূল নজরদারির দায়িত্বে থাকবে কলকাতা পুরসভার আলো বিভাগ। বুধবার পুরসভার সঙ্গে বিভিন্ন টেলিকম পরিষেবা সংস্থা, ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থা এবং কেব্ল সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রসঙ্গত,দীর্ঘ দু’বছর ধরে কেব্ল সংযোগের তার সরানোর কাজের নজরদারির দায়িত্ব ছিল ‘অল বেঙ্গল কেব্ল টিভি অ্যান্ড ব্রডব্যান্ডঅপারেটর্স ইউনাইটেড ফোরাম’-এর উপরে। এতে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছিল দু’টি। প্রথমত, তিন পক্ষের মধ্যে কেন শুধু ফোরামকেই এই দায়িত্ব দেওয়া হল? এবং দ্বিতীয়ত, কেব্লের তার সরানোর মূল দায়িত্বে পুরসভা থাকলেও কেন তারা নজরদারির ভার নিজেরা না নিয়ে অন্যবেসরকারি সংস্থাকে দিল? এ দিন মেয়র পারিষদ (আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সী বলেন, ‘‘এ বার থেকে শহর জুড়ে কেব্ল সংযোগের তার সরানোর কাজে নজরদারি চালাবেন পুরসভার ডিজি (আলো)। তিন পক্ষের সবাইকে কোনও কাজ করতে হলে আগে তাঁকে জানাতে হবে।’’
এ দিনের বৈঠকে শহরের ৪০টি রাস্তার তালিকা তিন পক্ষকেই দেওয়া হয়েছে। মেয়র পারিষদ (আলো) জানান, ওই ৪০টি রাস্তায় মাটির উপর থেকে যাবতীয় তার সরিয়ে শীঘ্রই সেগুলি মাটির নীচে বসানোর কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। কাজে গাফিলতি থাকলে পুরসভার তরফে তার কেটে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, শহরে কেব্ল টিভি এবং ইন্টারনেট পরিষেবার তারের জট সরাতে কলকাতা পুরসভার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। পুরসভার নির্দেশ ও নীতিগতসমস্যার কারণে স্থানীয় কেব্ল অপারেটর ও টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছিল।
এ দিন মেয়র পারিষদ (আলো) বলেন, ‘‘বৈঠকে সব পক্ষকেই বলা হয়েছে, পুরসভার আলো বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় ও যোগাযোগ রেখে কাজ করতে। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তা পুরসভাকে জানাতে হবে। তিন পক্ষের প্রতিনিধিদের এ-ও বলা হয়েছে, একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে তাঁরা যেন গ্রাহকদের সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়ার উপরে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন।’’
টেলিকম শিল্পমহল সূত্রের দাবি, কোন রাস্তার উপরে অবাঞ্ছিত তার বা কেব্ল কাটা হবে, তা ঠিক করবে পুরসভা। টেলিকম সংস্থা, ইন্টারনেট সংস্থাকিংবা কেব্ল অপারেটরেরা নন। পুরসভা নিজেই সেই তার কেটে দেবে। যদি কর্মীর অভাব বা অন্য কোনও কারণে পুরসভার পক্ষে সেই কাজ করা সম্ভব না হয়, তা হলে ওই কাজের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাহায্য নেবে। কিন্তু সেই তার বা ফাইবার কাটা হবে একমাত্র পুরসভারপ্রতিনিধির উপস্থিতিতেই। প্রসঙ্গত অভিযোগ, কোথাও কোথাও স্থানীয় কেব্ল অপারেটরেরা দাবি করছিলেন, তার কাটার দায়িত্ব তাঁদের উপরে দিয়েছে পুরসভা।
টেলিকম সংস্থা সূত্রের খবর, গলি বা ছোট রাস্তার ধারের বাসিন্দাদের আপাতত মাটির উপর দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থাতেই নতুন সংযোগ দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তবে বড় রাস্তাগুলিতে ভূগর্ভস্থ পরিকাঠামো তৈরি হতে সময় লাগলেও সেখানে এ ভাবে তিন পক্ষের কেউই সংযোগ দিতে পারবে না। ফলে তত দিন ওই সব অঞ্চলের গ্রাহকেরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন, সেই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।