Medical

ভুল করে খেয়ে ফেলা পয়সা, কাচের গুলি বের করে আনবে মেডিক্যালের চিকিৎসকের তৈরি বিশেষ যন্ত্র

২০০৭ সালে এসএসকেএম হাসপাতালে এমনই একটি অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন সুদীপ। সেখান থেকেই এই যন্ত্র আবিষ্কারের চিন্তাভাবনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:০৫
Share:

বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে অবশেষে গত ৩১ জানুয়ারি পেটেন্টের অনুমোদন হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সুদীপ। —নিজস্ব চিত্র।

খেলার ছলে ২ টাকা, ১ টাকার কয়েন, লুডোর ঘুঁটি বা পেনের ঢাকা মুখে পুরে ফেলে শিশুরা। শ্বাসযন্ত্রে আটকে যাওয়া ওই জিনিস বের করে আনতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় চিকিৎসকদের। তবে কাটাছেঁড়ার দিন এ বার শেষ। এ বার সহজেই এবং অল্প সময়ের মধ্যে শরীর থেকে ওই বস্তু বার করে আনবে একটি যন্ত্র। এই যন্ত্রটি তৈরি করেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সুদীপ দাস। সম্প্রতি তার পেটেন্টও পেয়ে গিয়েছেন তিনি।

Advertisement

ওই চিকিৎসক জানান, এই যন্ত্রটির পোশাকি নাম ‘এসোফেজিয়াল স্মুথ স্লিপারি ফরেন বডি পুলার’। তবে কিছু দিন পর খোলা বাজারে এটি চলে এলে তখন সহজ এবং ছোট কোনও নাম দেওয়ারও পরকল্পনা রয়েছে সুদীপের। শরীর থেকে ‘ফরেন বডি’ বার করার যন্ত্রটি দেখতে অনেকটা চামচের মতো। গোড়ার দিকে অংশটি অনেকটা আঁকশির মতো কাজ করবে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক।

সাধারণত শিশুরা মসৃণ কিছু গিলে ফেললে বা খেলতে গিয়ে নাক দিয়ে কিছু ঢুকিয়ে ফেলে বিপত্তি ঘটায়। এর ফলে খাদ্যনালীতে আটকে থাকা বস্তুকে চিকিৎসকেরা ঠেলে পেটে পাঠিয়ে দেন যাতে পরে মলত্যাগের সময় তা বেরিয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারেরও দরকার পরে। অনেক সময় ট্র্যাকিয়া বা শ্বাসনালীতে খাবার আটকে গেলে শিশু কাঁদতে বা কথা বলতে পারে না। সে ক্ষেত্রে আরও সমস্যা বাড়ে।

Advertisement

তবে এ বার আর তেমন কিছু করতে হবে না। এই ক্ষেত্রে ‘ফরেন বডি’টি পেটে ঠেলে দেওয়ার বদলে মুখ দিয়েই বার করে নেওয়া সম্ভব হবে বলে বলছেন মেডিক্যালের ওই চিকিৎসক। এ ক্ষেত্রে রোগীকে অজ্ঞান করে অপারেশন করার পক্ষপাতী এই চিকিৎসক।

চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এই পুলারটি (যন্ত্র) মুখ দিয়ে রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হবে। লম্বায় ৪৫ সেন্টিমিটারের যন্ত্রটির মাথার দিকে যে এর চামচ বা আঁকশির মতো অংশটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পর মাথার ৮ মিলিমিটার বাই ৬ মিলিমিটার অংশটি ৯০ ডিগ্রি করে বাঁকিয়ে দেওয়া যাবে। তাতে শরীরের ভিতর যে বস্তু আটকে আছে, তাকে আঁকশির মতে আটকে ধীরে ধীরে টেনে বার করে নেওয়া যাবে।’’

২০০৭ সালে এসএসকেএম হাসপাতালে এমনই একটি অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন সুদীপ। সেখান থেকেই এই যন্ত্র আবিষ্কারের চিন্তাভাবনা। ভাবতে ভাবতে এই যন্ত্রের নকশা তৈরি করেন তিনি। তার বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য মেডিক্যালের ওই চিকিৎসক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাহায্য নিয়েছিলেন। তার পর স্টেনলেস স্টিল দিয়ে যন্ত্রটি তৈরি করার জন্য তিনি সাহায্য নেন একটি বেসরকারি সংস্থারও। বিভিন্ন বাধা কাটিয়ে অবশেষে গত ৩১ জানুয়ারি পেটেন্টের অনুমোদন হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সুদীপ। এ বার বাজারে আসার অপেক্ষা।

সুদীপের কথায়, ‘‘চিকিৎসার জন্য যাতে এই যন্ত্র ব্যবহার করা যায় তার জন্য এটা বাজারে ছাড়ার কথা চলছে। ইতিমধ্যেই ১৩-১৪টি শিশুর শরীর থেকে ‘ফরেন বডি’ বার করার কাজে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। যে সব শিশু অজান্তে কিছু খেয়ে বিপত্তি ঘটিয়ে ফেলে, তাদের দ্রুত চিকিৎসা করে মা-বাবাকে দুশ্চিন্তা মুক্ত করাই চিকিৎসক হিসাবে আমার লক্ষ্য ছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement