KK

Debate on KK's Death: এসএফআইয়ের কথার কী আর জবাব দেব, ওরা কেকে-কে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছে নাকি!

প্রিয় শিল্পী মারা গিয়েছেন। এ শোকের সময়। ওরা কাদা ছোড়াছুড়ির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে। আমরা নই।

Advertisement

সুপ্রিয় চন্দ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২২ ১৮:২৯
Share:

প্রিয় শিল্পী চলে গিয়েছেন। এ শোকের সময়।

তিন মিনিটের আলাপ যে এ ভাবে তিন ঘণ্টায় শেষ হয়ে যাবে, ভাবতেই পারিনি! মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নজরুল মঞ্চে গিয়েছিলাম। কেকে-র অনুষ্ঠান বলে কথা! আমাদের অনেকের কাছেই ছেলেবেলার অনেকটা তাঁর গানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ছিল। এখনও আছে। কারণ, বড় হতে হতেও কেকে-র গান, তাঁর কণ্ঠস্বরের মায়া ভুলে যাওয়া যায়নি। বরং বলা ভাল, ভুলে যেতে দেননি শিল্পী স্বয়ং। সেই শিল্পীর অনুষ্ঠানই নজরুল মঞ্চে ছিল মঙ্গলবার। আমাদেরই ছাত্র সংগঠনের আয়োজনে। শেষ ছ’-সাত দিন ধরে কত ফোন যে পেয়েছি! কত জনের যে মেসেজ পেয়েছি অনুষ্ঠানের পাস চেয়ে, তার ইয়ত্তা নেই।

Advertisement

আর এখন এসএফআই এসেছে আমাদের সমালোচনা করতে! ওরা কারা! সেটাই তো বুঝতে পারছি না। প্রিয় এক জন মানুষ চলে গিয়েছেন। আর ওরা সেই কাদা ছোড়াছুড়ির খেলায় নেমেছে!

আমি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কিন্তু গুরুদাস কলেজের অনুষ্ঠান তো আমাদেরই। গিয়েছিলাম। কেকে-কে সামনাসামনি এই প্রথম দেখলাম। অনুষ্ঠান শুরুর আগে গ্রিনরুমে। আরও অনেকের সঙ্গে আমিও সেখানে। কী অদ্ভুত ‘জেশ্চার’। হাসি লেগে রয়েছে মুখে। মাত্র তিন মিনিট ছিলাম। সারা জীবনের সঞ্চয়। তার পরেই তো মঞ্চে উঠে গেলেন ‘সাউন্ড চেক’ করতে! এর পর একের পর এক গান।

Advertisement

নজরুল মঞ্চে যেন ছাত্রছাত্রীরা ভেঙে পড়েছিলেন। এত ভিড়। এক এক জন করে তো গোনা সম্ভব নয়! তবে সাদা চোখে দেখে বুঝেছি, আসন সংখ্যার থেকে লোক বেশি হয়েছিল। আড়াই হাজারের বসার ব্যবস্থা থাকলেও প্রেক্ষাগৃহে মঙ্গলবার অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষ ছিলেন। তবে একটা কথা বলতে পারি, পাস ছাড়া কেউই প্রেক্ষাগৃহে ঢুকতে পারেননি। প্রচুর আলোও ছিল। অনেকে বলছেন, বাতানুকূল যন্ত্র কাজ করছিল না। আমি ছিলাম মঞ্চের পাশেই। আমার খুব একটা গরম লাগছিল না। কিন্তু নীচে-থাকা অনেকেই বলছিলেন খুব গরম লাগছিল। কিন্তু আমার কখনও মনে হয়নি, এসি বন্ধ। অত লোক থাকলে যেমনটা হয়, ভিতরের আবহাওয়া তেমনই ছিল। তবে দেখছিলাম, কেকে ভীষণ ঘামছিলেন। জলও খাচ্ছিলেন। মুখ-মাথা মুছছিলেন। আমরা কিন্তু এতটা ঘামছিলাম না। ওঁর বাদ্যযন্ত্রীরাও নন।

তিন নম্বর গান শেষ করেই কেকে মঞ্চের পিছনের অংশে চলে গেলেন। জল খাওয়ার সেই শুরু। তার পর দরদর করে ঘামতে দেখছিলাম ওঁকে। অবাক লাগছিল! এক জন লিড সিঙ্গার, গান গাইতে গাইতে এত বার জল খাচ্ছেন কেন! অনেকের লাইভ অনুষ্ঠান দেখেছি। কিন্তু এমন ভাবে জল খেতে কাউকে আগে দেখিনি। তিনি যখন ‘আঁখো মে তেরি, আজব সি আজব সি আদা হ্যায়…’ গাইছেন, আমি তখন একটু হল থেকে বেরিয়েছিলাম। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু ফিরে আসার আগেই শুনতে পেলাম, তিনি আর নেই।

এমন মর্মান্তিক মুহূর্তে শুনতে পাচ্ছি, আমাদের সহযোগী ছাত্র সংগঠন এসএফআই নাকি বলছে, নজরুল মঞ্চে যা ঘটেছে এবং সঙ্গীতশিল্পী কেকে-র যে করুণ পরিণতি হয়েছে, সে জন্য দায়ী গুরুদাস কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদ। আমি এ নিয়ে কিচ্ছুটি বলব না। শুধু এটুকু বলতে চাই, কেকে-কে নিয়ে তো দূরঅস্ত্‌, ওরা দীর্ঘ দিন কোনও বড় অনুষ্ঠানই করেনি। বড় অনুষ্ঠান করে যারা, তারা কেউ কিছু বলছে না! ওদের যত চিন্তা।

প্রিয় শিল্পী চলে গিয়েছেন। এ শোকের সময়। ওরা কাদা ছোড়াছুড়ির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে। আমরা নই।

(লেখক প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক। মতামত নিজস্ব)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement