সংঘর্ষের আশঙ্কা ছিল। তা-ই সত্যি হল।
মঙ্গলবার দুপুরে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় রাজারহাটের ডিরোজিও মেমোরিয়াল কলেজ। সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া রাজারহাটের প্রাক্তন সিপিএম নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর দলবল এবং তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীদের লড়াইয়ে লণ্ডভণ্ড হয় ক্যাম্পাস। কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, সংঘর্ষে কয়েক জন আহত। তাপস চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীদের কলেজের বাইরে এবং সব্যসাচী দত্তের গোষ্ঠীকে কলেজের মধ্যে রেখে গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ।
এ দিন ঠিক কী ঘটেছিল?
কলেজ সূত্রে খবর, ২১ জুলাইয়ের তৃণমূলের সমাবেশের প্রচারের জন্য সম্প্রতি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন জমা পড়ে। পঠনপাঠন এবং ভর্তির প্রক্রিয়া ব্যাহত না করার শর্তে সোমবার কলেজের গেটের বাইরে একটি সভা করার অনুমতি দেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সোমবারের বদলে সেই সভা হয় মঙ্গলবার। উপস্থিত ছিলেন তাপসবাবু, আফতাবউদ্দিন-সহ কাকলিদেবীর অনুগামীরা। সভা ঘিরেই উত্তেজনা ছড়ায়। ডিরোজিও কলেজে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ নেতাদের অভিযোগ, ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের প্রচারের নামে ‘কলেজ-দখল’-এর চেষ্টা করছিলেন তাপসবাবুরা। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁরা কলেজে ঢুকতে চেয়েছিল। আমরা বাধা দিই। ওরা আমাদের শাসানি দিয়ে বলে, তাপসবাবুর গোষ্ঠীতে নাম না লেখালে কলেজে থাকা যাবে না।’’ যদিও তাপসবাবু অভিযোগ নস্যাৎ করে বলেন, ‘‘কীসের দখল! আমি তো এখন তৃণমূলেরই সদস্য। কলেজে তৃণমূলেরই ছাত্র সংসদ। আর এখানে কোনও দখলদারি চলবে না।’’
কিন্তু বহিরাগত হয়েও তিনি কেন কলেজে গিয়েছিলেন?
তাঁর জবাব, ‘‘কলেজে ঢুকিনি। ছাত্ররাই আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। তাই ওই সভায় যোগ দিয়েছিলাম।’’
অধ্যক্ষ দিব্যেন্দু তলাপাত্র বলেন, ‘‘কলেজে ঢুকে দেখি চারদিক লণ্ডভণ্ড। চেয়ারগুলি ভাঙা অবস্থায় পড়ে। ছাত্রদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।’’ এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের ছাত্র সংসদের সদস্যরা তাপস চট্টোপাধ্যায় ও কাকলি ঘোষদস্তিদারের বিরুদ্ধে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিচ্ছেন। কলেজ সূত্রের খবর, ডিরোজিও কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি হলেন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তাপসবাবুকে ভোটে হারিয়েই বিধায়ক হন সব্যসাচী। রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন তাপসবাবুও ছিলেন ওই কলেজ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সব্যসাচীবাবু অবশ্য এ দিনের গোলমাল প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি এখন অসুস্থ। শুনেছি ওখানে গোলমাল হয়েছে। শান্তি বজায় রাখার বিষয়টি পুলিশ দেখছে। বাকি বিষয়টি অধ্যক্ষ দেখছেন।’’
তাপসবাবুর তৃণমূলে যোগদানে গোলমালের আশঙ্কা আগে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতারা। সে প্রসঙ্গে বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে ফোন করা হলে কিছুটা উত্তেজিত স্বরে তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি না। ২১ জুলাইয়ের মিটিং নিয়ে ব্যস্ত আছি।’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই ঘটনা কারা করেছে, জানা যায়নি। কারও অভিযোগ, তাপস চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামীরা করেছে। কেউ আবার সব্যসাচীর অনুগামীদের নামে দোষারোপ করেছেন।’’ তৃণমূলের মহাসচিব হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘যদি তাপসবাবুর অনুগামীরা এই ঘটনার জন্য দায়ী হন, তবে তাঁদের বলব, অনেকে আমাদের দলে নতুন ঢুকেছেন। তাঁদের দলের সমস্ত রীতিনীতি ও অনুশাসন মেনে চলতে হবে। আর সব্যসাচীর অনুগামীদের প্রতি বার্তা: বহিরাগতরা কলেজে ঢুকে কলেজের সম্পত্তি নষ্ট করলে তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। দল পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করবে।’’
এ দিকে, শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারীদের অনুপস্থিতির কারণে সোমবারের পরে মঙ্গলবারও ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রইল শ্যামাপ্রসাদ কলেজে। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তৃণমূলের সৌভিক দাসের অভিযোগ, ‘‘মঙ্গলবার কলেজের গভর্নিং কমিটির সঙ্গে বৈঠক হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ দিন কলেজে কারও দেখা মেলেনি। অনেকে ভর্তি হতে এসেও ফিরে যায়।’’ এ বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তন্ময় বিশ্বাসের ফোন বন্ধ ছিল। এসএমএস করেও উত্তর মেলেনি।