(বাঁ দিকে) ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুনন্দা সরকার। ওই ওয়ার্ডেরই প্রাক্তন যুবনেতা সভাপতি কেদার দাস। (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
পরস্পরের বিরুদ্ধে সাট্টার ঠেক চালানো থেকে শুরু করে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন উত্তর কলকাতার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুনন্দা সরকার এবং যুবনেতা কেদার দাস। মঙ্গলবার কাউন্সিলর-যুবনেতার মধ্যে মারামারির ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায়। তাতে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব। খাস কলকাতাতেই দলের কাউন্সিলর এবং সংগঠনের নেতা পরস্পরের বিরুদ্ধে জুয়া ও সাট্টার ঠেক চালানোর অভিযোগ করায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। তাই ঘটনার পরদিনই ওই দু’জনকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে। দলের ‘কড়া বার্তা’ পাওয়ার পরেই সুর নরম করেছেন তাঁরা।
তৃণমূল সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ঘটনার পরেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছিল উভয়ের কাছে। তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দল কোনও রকম গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা বরদাস্ত করবে না। তবে তা প্রকাশ্যে জানানো হবে না। বিবদমান দু’জনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বা আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাওয়ায় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বুধবার বলেন, ‘‘দল দলের মতো ব্যবস্থা নেবে। কার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা সংবাদমাধ্যমের জানার প্রয়োজন নেই।’’ তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রকাশ্যে যে ভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে জুয়া-সাট্টার ঠেক চালানো, বেআইনি নির্মাণ করে অসাধু উপায়ে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ভাল চোখে দেখেননি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। কারণ, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। তাই সাধারণ মানুষের কাছে দলের ভাবমূর্তি ভাল রাখার দায়িত্ব যেমন একজন নির্বাচিত কাউন্সিলরের, তেমনই সংগঠনের পদে থাকা এক ব্যক্তিরও দায়িত্ব। তাই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে যে দল কঠোর পদক্ষেপ করতে পিছপা হবে না, তা তাঁদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঢুলিপাড়ায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। যুবনেতা কেদারের অনুগামীরা অভিযোগ করেন, ওই এলাকায় সাট্টা এবং জুয়ার ঠেক চালান কাউন্সিলর সুনন্দা ও তাঁর স্বামী বাবু সরকার। সেই কাজে বাধা দিতে গেলে কেদারকে ব্যাপক মারধর করেন ওই মহিলা কাউন্সিলর। সুনন্দা যুবনেতা কেদারকে সপাটে থাপ্পড় মারছেন, এমন ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। (যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)। তবে ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পর সুনন্দা পাল্টা দাবি করেন, কেদার ওই এলাকায় জুয়া ও সাট্টার ঠেক চালান। সেই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছে তাঁর স্বামীকে। কেদার-অনুগামীদের ছোড়া ইটের আঘাতে তাঁর স্বামীর মাথা ফেটে গিয়েছে। আর যে ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়েছে, তাতে যা দেখা যাচ্ছে তা সত্যি নয়। ওই সময়ে কেদারের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিতে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি কখনওই কেদারকে মারেননি।
মঙ্গলবারের ঘটনার পরে দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার চার জনকে গ্রেফতার করেছে বড়তলা থানার পুলিশ। ঘটনার পরে দু’জনেই পরস্পরের বিরুদ্ধে দলকে লিখিত অভিযোগ জানানোর কথা বলেছিলেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের কড়া ধমকের পর দু’জনেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। দলকে লিখিত অভিযোগ জানানো নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। বুধবার কাউন্সিলর সুনন্দা বলেছেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের মারা হয়েছিল। সে কথা আমি যথাস্থানে জানাব।’’ আর যুবনেতা কেদারের বক্তব্য, ‘‘আমি শয্যাশায়ী। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছি না। সুস্থ হয়ে ফিরে কিছু করলে সকলেই জানতে পারবেন।’’