আঙুল উচিঁয়ে ক্ষোভ প্রকাশ সৌমিত্র মজুমদারের। —নিজস্ব চিত্র।
বরাহনগরের পরে এ বার নিউ ব্যারাকপুর। পুর-চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে ফের প্রকাশ্য এল গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে দলের অন্দরে যে লড়াই আছে, তার আভাস মিলেছিল পুরভোটের আগেই। চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা হতে না হতেই দলের অন্দরের সেই অসন্তোষ আরও প্রকট ভাবে বেরিয়ে এল। দিন দুয়েক আগেই বরাহনগরে চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে পথ অবরোধ করেন ভাইস চেয়ারম্যান রামকৃষ্ণ পাল। আর বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করে ক্ষোভের বার্তা দিলেন নিউ ব্যারাকপুরের তৃণমূল কাউন্সিলর সৌমিত্র মজুমদার।
নিউ ব্যারাকপুরে এ দিন ছিল নতুন বোর্ডের শপথ গ্রহণ। অনুষ্ঠান বয়কট করে নিজেরই বৌদির বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখান সৌমিত্রবাবু। এ দিকে, এ দিনই মধ্যমগ্রামে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে দলীয় কোন্দল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার দু’ঘণ্টার মধ্যে জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দু’টি ঘটনাতেই দুই কাউন্সিলরকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এ দিন সন্ধ্যায় বিধাননগরে সাংবাদিক সন্মেলনে জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কাছে রামকৃষ্ণবাবু ও সৌমিত্রবাবুকে নিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।
নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা সূত্রে খবর, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সব কাউন্সিলরেরা এ দিন পুরসভার হল ঘরে উপস্থিত হন। তাঁদের সামনে জেলা সভাপতির পাঠানো মুখবন্ধ খাম নিয়ে আসেন দমদমের কাউন্সিলর রিঙ্কু দত্ত দে। নিয়ম অনুযায়ী, দলীয় কাউন্সিলরদের পাশের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে খামটি খোলা হয়। চেয়ারম্যান হিসেবে তৃণমূলের নিউ ব্যারাকপুরের সভাপতি সুখেন মজুমদারের স্ত্রী তৃপ্তি মজুমদারের নাম ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ, তখনই সুখেনবাবুর ভাই সৌমিত্রবাবু (তিনিও তৃণমূল থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর) আচমকা চিৎকার করে বলেন, ‘‘ওই চেয়ারম্যানকে মানছি না।’’ তাঁকে সমর্থন জানান অনুগামী কাউন্সিলরেরা। এর পরেই সৌমিত্রবাবু অনুগামীদের নিয়ে বেরিয়ে যান।
পুরসভা সূত্রে খবর, সেখান থেকে বেরিয়ে ওই কাউন্সিলর সোজা চলে যান শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে। সেখানে মাইকে তিনি ঘোষণা করেন, নতুন চেয়ারপার্সন সম্পর্কে তাঁর বৌদি। তাই তিনি জানেন তৃপ্তীদেবী রান্না ছাড়া কিছু পারেন না। কড়া, খুন্তি নিয়েই থাকেন। তাই বৌদিকে চেয়ারপার্সন হিসেবে তিনি মানতে পারবেন না। অনেকেরই কটাক্ষ, দেওর-বৌদি বিবাদ যেন এ জেলায় তৃণমূলের রাজনৈতিক চরিত্র। যেমন বনগাঁর ঠাকুর পরিবার।
সৌমিত্রবাবুর এই বক্তব্যের পরেই সভায় গোলমাল বেধে যায়। মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে সৌমিত্রবাবু তাঁর অনুগামীদের নিয়ে সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান। এর পরে অবশ্য তৃপ্তিদেবীই চেয়ারপার্সন হিসেবে শপথ নেন। পরে এ ব্যাপারে তৃপ্তিদেবী বলেন, ‘‘এ নিয়ে আমি কিছু মন্তব্য করব না। যা বলার দল বলবে।’’ একই বক্তব্য সুখেন্দুবাবুরও। তিনি বলেন, ‘‘সকলকে উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করতে হবে। দল যা নির্দেশ দেবে, তা সকলকে মেনে চলতে হবে।’’
এ দিনই রাজপুর-সোনারপুর পুরসভায় চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিয়েছেন তৃণমূলের পল্লব দাস।