উৎসবের আলোয় সেজেছে মন্দির চত্বর। শুক্রবার। — দীপঙ্কর মজুমদার
প্রতিবারের মতো এ বারও কালী পুজোর ভোর থেকে পরের দিন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আটোসাঁটো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বরে। গোয়েন্দাবাহিনী থেকে ডগ স্কোয়াড মন্দিরের নিরাপত্তায় মজুত থাকছে সবই। থাকছে অসংখ্য সিসি ক্যামেরার নজরদারি।
পাশাপাশি দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে মন্দিরের পিছনের দিকের বিকল্প রাস্তার পাশাপাশি স্কাইওয়াক তৈরির জন্য বন্ধ থাকা মূল রাস্তা রানি রাসমণি রোডের একাংশও শনিবার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। তবে সেনা ক্যাম্পাসের ভিতরের রাস্তা দিয়েই গাড়ি মন্দিরে ঢুকতে পারবে। এ দিকে, বালি ব্রিজ থেকে সহজে মন্দিরের সামনের রাস্তায় নেমে আসার জন্য একটি সিঁড়িও তৈরি করেছে পূর্ত দফতর। শনিবার চালু করা হবে সেটিও।
গঙ্গাতেও থাকবে আটোসাঁটো নিরাপত্তা। মন্দির সূত্রে খবর, ষাটের দশকে কালী পুজোর রাতে গঙ্গা থেকে ঘটে জল ভরতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। পুরোহিত-সহ আরও কয়েকজন জলে তলিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর থেকেই বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয় বলেই জানান মন্দির-কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির ও দেবোত্তর এস্টেটের অছি এবং সম্পাদক কুশল চৌধুরী জানান, রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ নৌকো নিয়ে অর্ধচন্দ্রাকৃতি বলয় তৈরি করে ঘিরে রাখে মূল মন্দিরের সোজাসুজি ‘চাঁদনী ঘাট’। সেখানে প্রতিটি নৌকোয় থাকে ব্যাটারি ও জেনারেটর চালিত পর্যাপ্ত জোরালো আলো। নৌকোয় থাকেন ডুবুরি, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও। কুশলবাবু বলেন, ‘‘গঙ্গায় বান চলে যাওয়ার পরে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ তা আমাদের জানান। এর পরে ঘাটে গিয়ে জল ভরতে যাওয়া হয়।’’ ওই নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাঝেই গঙ্গায় ডুব দিয়ে ঘট ভরা হয়।
যদিও নিরাপত্তার কারণে কালী পুজোর রাতে মন্দির চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পুরনো রেওয়াজ এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে গোটা মন্দির চত্বর জুড়ে এলিডি আলোর খেলার পাশাপাশি থাকে নাটমন্দিরে স্তোত্র পাঠের আয়োজন। সঙ্গে মূল মন্দিরের চারপাশের ছাদে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পাহারায় থাকেন পুলিশ বাহিনী। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় গোটা মন্দির চত্বর মুড়ে ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোনও রকম ফাঁক রাখা হচ্ছে না।’’ উর্দিধারীদের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী, বম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড— থাকবে সব কিছুই। মন্দির চত্বরে দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়ার পথে বসানো হচ্ছে অনেকগুলি ডোর মেটাল ডিটেক্টর। এ ছাড়া হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে প্রতিটি প্রবেশ পথে থাকবেন মন্দির ও পুলিশের নিরাপত্তাকর্মীরা।