হার্টে থাইরয়েডের বাসা, সফল অস্ত্রোপচার শহরে

গলায় নয়, বুকে। আক্ষরিক অর্থেই হৃদয়ে থাইরয়েড। হৃদ্‌পিণ্ডের মধ্যেই বাড়বাড়ন্ত ঘটে ফুলেফেঁপে উঠেছিল থাইরয়েড টিস্যু। ক্রমে তা বন্ধ করে দিয়েছিল রক্ত চলাচলের সব রাস্তা। ডাক্তারেরা অবশ্য গোড়ায় সেটা বোঝেননি। তাঁরা ভেবেছিলেন, শরীরের আর-পাঁচটা অঙ্গের মতো হার্টেও হয়তো কোনও টিউমার হয়েছে। অস্ত্রোপচার করে সেটি বাদও দিয়েছিলেন তাঁরা।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০২:৪৪
Share:

গলায় নয়, বুকে। আক্ষরিক অর্থেই হৃদয়ে থাইরয়েড।

Advertisement

হৃদ্‌পিণ্ডের মধ্যেই বাড়বাড়ন্ত ঘটে ফুলেফেঁপে উঠেছিল থাইরয়েড টিস্যু। ক্রমে তা বন্ধ করে দিয়েছিল রক্ত চলাচলের সব রাস্তা। ডাক্তারেরা অবশ্য গোড়ায় সেটা বোঝেননি। তাঁরা ভেবেছিলেন, শরীরের আর-পাঁচটা অঙ্গের মতো হার্টেও হয়তো কোনও টিউমার হয়েছে। অস্ত্রোপচার করে সেটি বাদও দিয়েছিলেন তাঁরা। তার পরে বাদ যাওয়া অংশের বায়োপ‌সি রিপোর্ট হাতে পেয়ে চোখ কপালে ওঠার অবস্থা সকলের। কারণ তাতেই ধরা পড়েছে টিউমার নয়, দিব্যি সতেজ থাইরয়েড টিস্যু বাসা বেঁধে ছিল বুকের মধ্যে।

চিকিৎসক মহলকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে এক্টোপিক থাইরয়েড-এর এই নজির। কলকাতার যে বেসরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেখানকার চিকিৎসকদের দাবি, ১৯৩০ সালে ইউরোপে এমন এক রোগীর হদিস পাওয়া গিয়েছিল। তার পরে এই ধরনের কোনও রোগীর নথি নেই।

Advertisement

আদতে কলকাতার বাসিন্দা, বছর ষাটের এক ব্যক্তি চাকরি করতেন নাইজেরিয়ায়। সপ্তাহ তিনেক আগে কলকাতায় ফেরার পরেই তিনি বুকে চাপ অনুভব করছিলেন। অল্পেই হাঁফ ধরে যাচ্ছিল। জ্বরও ছিল। কেমন যেন ধড়ফড় করত শরীরটা। মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের আউটডোরে ডাক্তাররা দেখে প্রাথমিক ভাবে কিছু ধরতে পারেননি। ওই ব্যক্তিকে ভর্তি করে ইকোকার্ডিওগ্রাফি হল। তাতে ধরা পড়ল, হৃদ্‌পিণ্ডের বাঁ দিকে একটা টিউমার রক্ত চলাচলের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম হল। তাতে দেখা গেল, অ্যাওর্টিক ভাল্‌ভের ঠিক নীচেই রয়েছে ওই টিউমার। ফলে হৃদ্‌পিণ্ড থেকে শরীরে রক্ত চলাচলের পুরো পথটাই কার্যত বন্ধ হওয়ার জোগাড়।

জরুরি ভিত্তিতে পরদিনই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ওপেন হার্ট সার্জারি করে বাদ দেওয়া হল সেই টিউমার। তার পরে? হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান এবং কার্ডিও থোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার বলেন, ‘‘থাইরয়েড টিস্যু সাধারণত গলায় পাওয়া যায়। এ ভাবে হার্টের মধ্যে থাইরয়েডের বাড়বাড়ন্ত খুবই বিরল। আর তাই এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য কারও কাছেই নেই। আমরা ধরে নিচ্ছি জন্ম থেকেই কোনও গঠনগত ত্রুটির কারণে ওই ব্যক্তির হার্টে এমন কিছু তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে জীবনযাত্রার ধরনের কোনও যোগ নেই। অস্ত্রোপচারের পরে উনি দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন। তবে বিষয়টি সম্পর্কে বিশদে জানতে আমরা আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব।’’

বিশেষজ্ঞরা জানান, থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে দু’ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। থাইরয়েড হরমোনের মাত্রার তারতম্যের সঙ্গে হার্টের নানা সমস্যার যোগ রয়েছে। শরীরে শক্তি কী ভাবে জমা থাকবে এবং কী ভাবে খরচ হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে থাইরয়েডের উপরে। মস্তিষ্ক, হার্ট, বিভিন্ন পেশী-সহ শরীরের নানা অঙ্গের কাজকর্মও ওই দুই হরমোনের উপরে নির্ভরশীল। কিন্তু হার্টের মধ্যে থাইরয়েড টিস্যুর অস্তিত্বের কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।

স্বভাবতই ওই অস্ত্রোপচারের কথা শুনে রীতিমতো অবাক অন্য হৃদ্‌রোগ চিকিৎসকেরাও। কার্ডিও থোরাসিক সার্জন সত্যজিৎ বসু বলেন, ‘‘নানা ধরনের টিউমার হতে পারে হার্টে। অস্ত্রোপচার করে সেগুলি বাদ দিলে রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেও পারেন। এ ছাড়া, হার্টের ভিতরে ডারময়েড টিউমার নামে এক ধরনের টিউমার হয়। তার ভিতরেও থাইরয়েডের অস্তিত্ব থাকতে পারে। কিন্তু শুধু থাইরয়েড টিস্যুর অস্তিত্বের কথা এই প্রথম শুনলাম।’’

হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বকেশ মজুমদারের কথায়, ‘‘হার্টে বিশেষ এক ধরনের টিউমার হয়। তাকে বলে মিক্সোমা। এর জেরে অনেক সময়ে রোগী হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান। কিন্তু হার্টে থাইরয়েডের কথা কখনও শুনিনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement