Park Street

Resturants: পার্ক স্ট্রিটের রসনাকে কুর্নিশ ঐতিহ্য ফলকে

এ দিন শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ক্ষেত্র হিসেবে ফলক বসল পার্ক স্ট্রিটের তিন রেস্তরাঁয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৪
Share:

উন্মোচন: পার্ক স্ট্রিটের মোক্যাম্বোয় সেই ফলক। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

তেমন বুড়ো নয় এ শহর ঠিকই! অতীত কালের অস্থি, মুদ্রা, চৈত্য, বিহার খুঁজে পাওয়ার আশা কম তার মাটি খুঁড়ে। তবু এ কথাও তো ঠিক, এত বছরে ‘অনেক শিশির ঝরে গেছে, তাতিয়ে গেছে কত না রোদ্দুর’! রবিবার দুপুরে পার্ক স্ট্রিটে তেমন কিছু পুরনো উত্তাপের ছোঁয়াচ পেল ২০২১-এর কলকাতা। যখন শহরের ঐতিহ্যশালী সাবেক ভোজশালা হিসেবে বিশেষ ফলক বসল তিনটি রেস্তরাঁয়।

Advertisement

বিশ শতকের গোড়ার দিকে কিন্তু ফ্লুরিজ-এর গাড়িবারান্দায় দু’জন শরিকের নামে লেখা থাকত ‘ফ্লুরিজ ট্রিঙ্কাজ’! ট্রিঙ্কাজের ভিতরে সেই ছবি দেখাচ্ছিলেন তরুণ কর্তা আনন্দ পুরী। ১৯৩৯-এ সুইস কর্তা ট্রিঙ্কা সাহেবের নেতৃত্বে পৃথক রেস্তরাঁর পথ চলা শুরু আজকের ঠিকানায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি হানার সময়ে মায়ানমার থেকে কলকাতায় আসেন ইহুদি তরুণ জোশুয়া এলিস। এবং দেশভাগের সময়ে লাহৌর থেকে কলকাতাবাসী পুরী দম্পতি, ওমপ্রকাশ ও শ্যারন। জোশুয়া এবং পুরীরাই ট্রিঙ্কাজের পরবর্তী মালিক। আনন্দ এ দিন বলছিলেন, রেস্তরাঁ সামলানোয় তাঁর ঠাকুরমা লাহৌর-কন্যা শ্যারনের দক্ষতার কথা! শুনে ইনট্যাকের পশ্চিমবঙ্গ চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক, ঐতিহ্য-রক্ষা কর্মী গৌরমোহন কপূর উচ্ছ্বসিত, “আরে, আমাদের পরিবারও তো লাহৌরের!”

ঘটনাচক্রে, এ দিন যাঁরা ঐতিহ্য ফলক পেলেন তাঁদের মধ্যে ট্রিঙ্কাজ ছাড়া মোক্যাম্বো, কোয়ালিটির কর্ণধারেরাও দেশভাগের সময়ে পাক মুলুকের পাট গুটিয়ে কলকাতায় আসেন। মোক্যাম্বোর কর্ণধার কোঠারি পরিবার করাচির। কোয়ালিটির প্রতিষ্ঠাতা ঘাই পরিবার, পাক পঞ্জাবের ঝিলম থেকে দিল্লি ও কলকাতায় ছড়িয়ে পড়েন। লন্ডনে পুরনো বাড়ির গায়ে ব্লু প্লাক বা নীল ফলকের কথা অনেকেই জানেন। অনেকটা সেই ধাঁচেই এ দিন শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ক্ষেত্র হিসেবে ফলক বসল পার্ক স্ট্রিটের তিন রেস্তরাঁয়।

Advertisement

ইনট্যাকের উদ্যোগে এ শহরের (১৯৬০-এর আগের) ১৪টি পুরনো ভোজশালা, মিষ্টি বা চপ-কাটলেটের দোকান থেকে বিরিয়ানি ঠেক বা পার্ক স্ট্রিটের রেস্তরাঁ রয়েছে ঐতিহ্য স্বীকৃতির তালিকায়। ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ বা বহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো আগেই ভোজ ঘরানা বা অশন-সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যেমন প্রাচীন মেক্সিকান বা ভূমধ্যসাগরীয় রান্নার ধারাও ঐতিহ্য বলে ধরা হয়। এ দেশে সবার আগে কলকাতাতেই এই কাজটা শুরু হল।

‘‘এর পরে ইউ চু, কে সি দাশ থেকে আরও উত্তরে সাবির, ভীম নাগ, প্যারামাউন্ট, কফিহাউস, দিলখুসা, নকুড়, নিরঞ্জন আগার, অ্যালেন কিচেনের মতো ঠিকানাতেও ফলক বসবে। মল্লিকবাজারের সিরাজও আছে তালিকায়’’— বলছিলেন ইনট্যাক সদস্য অয়ন ঘোষ। পুরনো রেস্তরাঁগুলির বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ফলকে জন্মসালও লেখা হচ্ছে। তবে বেশ কিছু পুরনো রেস্তরাঁর শুরুর সময়ের নথি পেতে জটিলতাও কম নেই। যেমন ফ্লুরিজ, নাহুম বা চিৎপুরের রয়্যালের থেকে নথি জোগাড় করা চলছে।

মোক্যাম্বো-কর্তা নীতিন কোঠারি বলছিলেন, “১৯৫৬ থেকে অন্দরসজ্জা এক। জার্মান স্থপতি মেসারসমিড কাজটা করেন। ডেভিল্ড ক্র্যাব, প্রন ককটেলের ধাঁচও বদলায়নি।’’ পার্ক স্ট্রিটে রবিবার এসেছিলেন কোয়ালিটির প্রবীণ কর্তা, ৮৬ বছরের বলদেবকৃষ্ণ ঘাই। তাঁর দাদা প্রেমনাথের হাতে রেস্তরাঁ শুরুর সময়ে তিনি সবে সতেরো। শহরের নামী, অনামী আরও বেশ কিছু খাবারের দোকানকেও স্বীকৃতি দিতে চায় ইনট্যাক। দার্জিলিংয়ের কয়েকটি শতাব্দীপ্রাচীন চা-বাগিচার মালিক গুডরিক-গোষ্ঠীও এই ঐতিহ্য সন্ধানের শরিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement