সিঁথি থানা। —ফাইল চিত্র
সিঁথিতে পুলিশ হেফাজতে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত তিন পুলিশ আধিকারিককে ‘ক্লোজ’ করা হল। অর্থাৎ তাঁদের বর্তমান দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হল। লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে, তিন জনের বিরুদ্ধেই শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত।
এর আগেই মঙ্গলবার মৃত ব্যবসায়ী রাজকুমার সাউয়ের ভাই রাকেশ সাউ সিঁথি থানার তিন আধিকারিক অরিন্দম দাস, সৌমেন্দ্রনাথ দাস এবং চিন্ময় মোহান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতে এফআইআর করে পুলিশ। সরকারি কর্মী হয়ে নিয়ম ভেঙে মারধর করা, মারধর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা এবং স্বীকারোক্তির জন্য জোর করে আটকে রাখা ও অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে ওই তিন পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে। এ দিন সন্ধ্যায় অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিক সৌমেন্দ্রনাথ দাসকে বুকে ব্যথার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
লালবাজার সূত্রে জানানো হয়েছে, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নির্ধারিত নিয়ম মেনে তিন চিকিৎসকের বোর্ড তৈরি করে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এ দিন হাজির ছিলেন শিয়ালদহ আদালতের প্রথম বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হরিপদ হাজরা। তিনি মৃতের ছোট ছেলে বিজয় সাউয়ের বয়ান রেকর্ড করেন। ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে বয়ান রেকর্ড পুরোটাই ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তে মৃতের দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে, এখনও তিন চিকিৎসকের বোর্ড ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেননি।
আরও পড়ুন: পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, থানার মধ্যেই মারপিট করল তৃণমূল-বিজেপি, দর্শক পুলিশ কর্তারা!
তবে লালবাজার সূত্রে খবর, বিভাগীয় তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়েই থানার আধিকারিকদের একাধিক গাফিলতি প্রকাশ্যে এসেছে। সিঁথি থানা থেকে ৫০০ মিটার দূরে সমর সরণির নির্মীয়মাণ বহুতলে যে চুরির তদন্ত ঘিরে গোটা ঘটনা, তাতেও গাফিলতির হদিশ পেয়েছেন শীর্ষ কর্তারা। প্রদীপ পাল নামে ওই বহুতলের প্রোমোটার ১৭ জানুয়ারি অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁর ওই নির্মীয়মান ফ্ল্যাটের দোতলা এবং তিন তলায় দরজা ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটেছে। দোতলার একটি ঘরে গোটা ফ্ল্যাটে ব্যবহারের সমস্ত ‘বাথরুম ফিটিংস’ এবং যন্ত্রপাতি ছিল। তা চুরি গিয়েছে বলে জানান প্রদীপ। চুরি যাওয়া জিনিসের আনুমানিক মূল্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকা বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
রাজা মনীন্দ্র রোডে এই নাইট শেল্টারে থাকেন আসুরা বিবি। —নিজস্ব চিত্র
এ দিন পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা স্বীকার করেন, ফৌজদারি বিধির ১৬০ নম্বর বা ৪১ ধারায় কোনও নোটিস না পাঠিয়েই থানায় জেরার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল সন্দেহভাজন আসুরা বিবিকে। তিনি অন্তঃস্বত্ত্বা। এলাকায় তাঁর পরিচিতি কাগজকুড়ানি হিসাবে। থাকেন রাজা মণীন্দ্র রোডে পুরসভার নাইট শেল্টারে। আসুরার নাইট শেল্টারের উল্টো দিকেই রাজকুমারের লোহা লক্কর কেনা-বেচার দোকান। ওই নাইট শেল্টারের ১২২ জন বাসিন্দার অধিকাংশই কাগজকুড়ানি। তাঁরা প্রত্যেকেই রাজকুমারের কাছেই ছাঁট কাগজ, লোহা বিক্রি করেন। আসুরাও করেন। শীর্ষ কর্তাদের এক জন বলেন, ‘‘যথেষ্ট জোরালো প্রমাণ ছাড়াই অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলাকে জেরা করা বা তার বয়ানের ভিত্তিতে কাউকে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে যে সতর্কতা নেওয়া উচিৎ ছিল তা নেওয়া হয়নি সিঁথির ক্ষেত্রে।’’
আরও পড়ুন: ফল স্পষ্ট হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হাস্যরসের সুনামি, মিম-কার্টুন-প্যারোডিতে ভরল দেওয়াল
এমনকি জেরার মুখে যে রাজকুমার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, সেই তথ্যও থানার ওসি জানাননি ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের। এক শীর্ষ কর্তা স্বীকার করেন, গোটা ঘটনা ঘটেছে সন্ধ্যা ৬টার সময়। আর বিভাগীয় ডেপুটি কমিশনার থেকে শুরু করে লালবাজারের কর্তারা বিষয়টি জানতে পেরেছেন সন্ধ্যা সাতটায়। তার মধ্যে গন্ডগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। ফলে ফের এক বার প্রশ্ন উঠেছে সিঁথি থানার গাফিলতি নিয়ে। এক শীর্ষ কর্তা ইঙ্গিত দেন, অভিযুক্ত তিন আধিকারিক ছাড়াও ব্যবস্থা নেওয়া হতে চলেছে থানার ওসির বিরুদ্ধেও।