‘যারা ওকে ছুড়ে নীচে ফেলেছিল, তারা এখন পাশ করা ডাক্তার!’

ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাকে। যখন উদ্ধার করতে যাওয়া হয়, কাঁপছিল সে, প্রস্রাব করে ফেলেছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তখনও সে লেজ নাড়াচ্ছিল।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৮
Share:

চেন্নাইয়ে বহুতল থেকে কুকুরকে ফেলে দেওয়ার এই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। (ইনসেটে) একটি পথকুকুরের সঙ্গে শ্রাবণ কৃষ্ণন।

ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাকে। যখন উদ্ধার করতে যাওয়া হয়, কাঁপছিল সে, প্রস্রাব করে ফেলেছিল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তখনও সে লেজ নাড়াচ্ছিল। যখন তাকে দু’হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নেওয়া হয়েছিল, চোখে-মুখে ভয়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রতি সে যে তখনও আস্থা হারায়নি, সেই চিহ্নও ছিল।

Advertisement

ওই দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন শ্রাবণ কৃষ্ণন। কেঁদেছিলেন আরও অনেকে! আড়াই বছর আগে চেন্নাইয়ে বহুতলের ছাদ থেকে একটি কুকুরকে নীচে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন ওই রাজ্যেরই একটি মেডিক্যাল কলেজে পাঠরত দুই পড়ুয়া। সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তোলপাড় হয়েছিল দেশ। কুকুরটিকে সে সময়ে উদ্ধার করেছিলেন পশুপ্রেমী শ্রাবণ, যিনি নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৬টি কুকুরছানাকে খুনের ঘটনা শুনে শিউরে উঠছেন। এক শ্রেণির মানুষের হিংস্রতায় বাক্‌রুদ্ধ শ্রাবণ বলছেন, ‘‘আমরা ক্রমশ হিংস্র হয়ে উঠছি। একটু লক্ষ করে দেখা যাবে, সারা দেশে পশুপাখিদের উপরে মানুষের অত্যাচারের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। আমরা কেমন পাল্টে যাচ্ছি!’’

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কী ভাবে ১৬টি কুকুরছানা মারা গেল, তা নিয়ে খোঁজখবর করছেন শ্রাবণ। কলকাতায় পরিচিতদের থেকে খুঁটিয়ে জানছেন ঘটনাপ্রবাহ। তিনি বলছেন, ‘‘বিজ্ঞানসম্মত ভাবে একটা জিনিস নিয়ে গবেষণাও চলছে যে, খুনিরা কিন্তু সাধারণ ভাবে পশুপাখিদের দিয়েই খুন করা শুরু করে। ফলে যে বা যারা এই ১৬টি কুকুরছানাকে খুন করল, তাদের মধ্যে সেই মানসিকতা কোথাও সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘মার মার, পুরো শেষ করে দে’​

আড়াই বছর আগে চেন্নাইয়ে ভদ্র নামের যে কুকুরটিকে ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তাকে দত্তক নিয়েছেন শ্রাবণেরই এক বন্ধু। ভদ্র এখন ভাল আছে। তবে মামলাটি এখনও চলছে বলে জানাচ্ছেন শ্রাবণ। তাঁর কথায়, ‘‘দু’সপ্তাহ আগেই মামলার শুনানি ছিল। যারা ওকে ছুড়ে নীচে ফেলেছিল, তারা এখন পাশ করা ডাক্তার হয়ে গিয়েছে!’’

পশুপাখিদের অধিকার রক্ষায় কড়া আইন না থাকার জন্যই এমন ঘটনা আকছার ঘটছে বলে মনে করছেন শ্রাবণ। এ ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য, অন্য দেশ পশুপাখিদের হত্যা বা নির্যাতনের বিষয়টি যেখানে যথেষ্ট কড়া হাতে সামলাচ্ছে, বহু টাকা জরিমানার পাশাপাশি দোষীদের হাজতবাসও হচ্ছে বিদেশে, সেখানে এখনও এই দেশ পিছিয়ে। কারণ ‘প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট, ১৯৬০’ (পিসিএ অ্যাক্ট) অনেক পুরনো আইন। এখানে জরিমানার পরিমাণও খুব কম। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২৮ ও ৪২৯ ধারা অনুযায়ী পশুপাখির উপরে নির্যাতন বা তাদের হত্যা করলে সর্বোচ্চ দু’থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হাজতবাস হতে পারে।

কুকুর বা পশুপাখিদের নিয়ে অজ্ঞতা বা অনেক ভ্রান্ত ধারণাও এ ধরনের ঘটনার জন্ম দেয় বলে মনে করছেন শ্রাবণ। তাঁর কথায়, ‘‘এ ধরনের ঘটনা আটকাতে গেলে একদম ছোট থেকেই পশুপাখিদের সঙ্গে কী রকম ব্যবহার করতে হবে, সে সম্পর্কে স্কুলে নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রম চালু করা দরকার। তা হলে বাচ্চারা গোড়া থেকেই বুঝতে পারবে যে পশু মাত্রই বিপজ্জনক নয়।’’

কুকুর বিপজ্জনক তো নয়ই, বরং মানুষ তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেও তারা সেটা করে উঠতে পারে না বলে মনে করেন পশুপ্রেমীরা। ‘‘তাই ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার পরেও তারা লেজ নাড়তে থাকে। কৃতজ্ঞতায়, বিশ্বাসে, বন্ধুত্বের প্রকাশে’’

—বলছেন শ্রাবণ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement