‘সুবিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পেরোলাম’

লেক মার্কেটের কাছে দুর্ঘটনায় নিহত তরুণী মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মা-বাবা শ্যারন ও বিজয় সিংহ চৌহান তখন বেঙ্গালুরুতে। সোনিকার বৃদ্ধ ঠাকুরদা, একদা দেশের নামী জকি জগদীশ চৌহানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কলকাতা পুলিশের ফোনটা পান বেঙ্গালুরুতে বসেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০২:১৯
Share:

স্মৃতি: মল্লিকবাজার কবরস্থানে সোনিকার সমাধি। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ

মেয়ের জন্মদিনের আগে ইতিবাচক কিছু ঘটবে, আশায় বুক বাঁধছিলেন তাঁরা। সেই সঙ্গে চলছিল সদ্য-প্রয়াত মেয়ের স্মৃতিতে বড় কাজের প্রস্তুতি। তার আগেই খবরটা এল, শুক্রবার সাতসকালে।

Advertisement

লেক মার্কেটের কাছে দুর্ঘটনায় নিহত তরুণী মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মা-বাবা শ্যারন ও বিজয় সিংহ চৌহান তখন বেঙ্গালুরুতে। সোনিকার বৃদ্ধ ঠাকুরদা, একদা দেশের নামী জকি জগদীশ চৌহানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কলকাতা পুলিশের ফোনটা পান বেঙ্গালুরুতে বসেই।

সোনিকার মা-বাবার তরফে বিবৃতিতে আপাত ভাবে জটিলতা নেই। তাঁরা বলছেন, ‘‘অভিভাবক হিসেবে মেয়ের জন্য এখনও আমরা গভীর কষ্টে। তবে সত্যিটা ঠিক বেরোবে এবং সুবিচার পাব— এই বিশ্বাসে কখনও চিড় ধরেনি। সেই সুবিচারের পথেই আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ পেরোলাম বলে মনে হচ্ছে।’’ আগামী বুধবার, ১২ জুলাই সোনিকার জন্মদিনের ঠিক আগে অভিযুক্ত বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পরে এটাই বলছেন চৌহান দম্পতি।

Advertisement

তবে এত সহজে যে এই কথাগুলি বলতে পারবেন, ভাবতে পারেননি তাঁরা। বরং মত্ত অবস্থায় স্টিয়ারিংয়ে বসে সোনিকাকে বাড়ি পৌঁছনোর সময়ে বিক্রম বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠলেও পুলিশের একাংশ কোনও প্রভাবশালী মহলের চাপে তাঁকে আড়াল করছে বলে মৃতার আত্মীয়েরা মনে করেছিলেন। এ নিয়ে পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থও হন সোনিকার মা-বাবা। পুলিশের উপরে তবু আস্থা রেখেছেন। এ দিন তাঁদের আইনজীবী সঞ্জয় বসুও তাঁদের প্রশংসা করে বলেন, ‘‘তাঁদের সুভদ্র আত্মমর্যাদাবোধ ও ধৈর্যের কথা বিশেষ ভাবে বলতে হয়। যে কোনও নাগরিকেরই তাঁদের দেখে শেখা উচিত।’’

কী পরিস্থিতিতে সোনিকা দুর্ঘটনার শিকার হলেন, তা নিয়ে নিহত তরুণীর দিকেও কেউ কেউ আঙুল তুলেছিলেন। সোনিকার মা-বাবা শান্ত ভাবে তারও জবাব দিয়েছেন। সোনিকা যে তাঁদের জানিয়েই বন্ধুদের সঙ্গে ওই রাতে নাইট ক্লাবে গিয়েছিলেন, তা জানান পরিজনেরা। সোনিকার মৃত্যুর পরেও পরিবারের তরফে বলা হয়, ‘‘প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের ব্যক্তিস্বাধীনতায় আমরা বিশ্বাস রেখেছি। কিন্তু যে বন্ধুকে বিশ্বাস করে সোনিকা গাড়িতে উঠেছিলেন, তিনি এমন হঠকারিতার পরিচয় দেবেন, তা মেনে নেওয়া যায় না।’’ বিক্রমের বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপ তাই অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করেন চৌহানরা।

তবে চৌহান দম্পতি এখন তাঁদের প্রাণবন্ত মেয়ের স্মৃতিতে একটি সেবামূলক ফাউন্ডেশন গড়ার কাজ নিয়েই ভাবছেন। রাজ্য সরকারের সহায়তায় সোনিকার মতো সম্ভাবনাময় লড়াকু মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে তাঁরা কাজ করবেন বলে সূত্রের খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement