সাউথ ট্যাংরা রোডে ভূগর্ভস্থ নর্দমা তৈরির জন্য আনা হয়েছে পাইপ। নিজস্ব চিত্র
বর্ষাকালে কলকাতার যে সব এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে, ট্যাংরা তাদের মধ্যে অন্যতম। পূর্ব কলকাতার এই অঞ্চলটির একটা বড় এলাকা বর্ষায় জলের নীচে চলে যায়, ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের। এ বার তাই ট্যাংরার নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুরসভা। ট্যাংরা ফার্স্ট লেন এবং সাউথ ট্যাংরা রোডে তৈরি হচ্ছে ভূগর্ভস্থ নর্দমা। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশা, এই কাজ সম্পূর্ণ হলে জল জমার হাত থেকে মুক্তি মিলবে।
৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি) সন্দীপন সাহার দাবি, এই দুই রাস্তায় ভূগর্ভস্থ নর্দমা তৈরি হলে এলাকার নিকাশির হাল পাল্টে যাবে।
তিন দশক আগেও ট্যাংরার অলিগলিতে চামড়ার ব্যবসা আর চিনে রেস্তরাঁ ছিল পাশাপাশি। বর্তমানে চামড়ার কারখানাগুলি ওই এলাকা থেকে সরে গেলেও রয়ে গিয়েছে পুরনো নিকাশি ব্যবস্থা। ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশের মতে, এখানে এখনও খোলা নর্দমা থাকার কারণে প্লাস্টিক-সহ নানা ধরনের আবর্জনা আটকে থাকে। সময় মতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় বর্ষায় জল জমে। ট্যাংরা ফার্স্ট লেনের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘অল্প থেকে মাঝারি বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তা জলের নীচে চলে যায়। বেশি বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। এক বার তো কোমর সমান জল দাঁড়িয়েছিল।’’ সাউথ ট্যাংরা রোডের ধারে একটি ভাতের হোটেলের মালিক বলছেন, ‘‘বর্ষায় রাস্তায় জল জমে গেলে দোকান বন্ধ রাখতে হয়। ব্যবসা তখন লাটে ওঠে।’’
ট্যাংরা ফার্স্ট লেনে ইতিমধ্যেই ভূগর্ভস্থ নর্দমা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সন্দীপন জানালেন, ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। পুরসভার নিকাশি দফতর সূত্রের খবর, ফার্স্ট লেনের কাজ শেষ হলে তার পরে সাউথ ট্যাংরা রোডে নর্দমা তৈরির কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যেই পাইপ নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এখনই কাজে হাত দেওয়া হবে, না কি পরে কাজ শুরু হবে— তা ঠিক হয়নি।
নিকািশ দফতরের আধিকারিকদের একাংশের যুক্তি, রাস্তা খোঁড়ার পরে বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ করে দিতে হলে ভোগান্তির মুখে পড়বেন স্থানীয়েরা। সাউথ ট্যাংরা রোডের কাজ শেষ হলে সেই নর্দমার সঙ্গে মিশবে ট্যাংরা ফার্স্ট লেনের নর্দমা। ফলে পুরসভার সবচেয়ে বড়় ওয়ার্ডটির একটি বিস্তীর্ণ এলাকা বর্ষায় জল জমার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াং লুয়ের কথায়, ‘‘বহু বছর জমা জলের ভোগান্তি সহ্য করছি, এ বছরও না-হয় করব। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হোক। আগামী দিনে যেন জল-ভোগান্তির হাত থেকে মুক্তি পাই।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, ট্যাংরা ফার্স্ট লেনে ভূগর্ভস্থ নর্দমা তৈরিতে খরচ হচ্ছে আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকা। ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে সাউথ ট্যাংরা রোডের নিকাশি ব্যবস্থার জন্য। স্থানীয় কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘জল জমা দীর্ঘ দিনের সমস্যা। তাই নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করতে উদ্যোগী হয়েছি। এই দু’টি রাস্তায় ভূগর্ভস্থ নর্দমা তৈরি হলে জল জমার ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, চিনেপাড়ার রেস্তরাঁগুলিতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আসেন। বর্ষায় দুর্ভোগের মুখে পড়েন তাঁরাও। নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত হলে জমা জল থেকে রেহাই মিলবে তাঁদেরও।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।